সূর্যের আলোর উপর জীবজগতের নির্ভরতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই৷ কিন্তু মানুষের শরীরের উপর সূর্যের আলোর সব রকম প্রভাব এখনো অজানা৷ বিজ্ঞানীরা সেই রহস্য উন্মোচন করতে বহুমুখী গবেষণা চালাচ্ছেন৷
সূর্য ছাড়া পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন সম্ভব হতো না৷ মানুষের উপর সূর্যের আলোর নানা রকম প্রভাব আছে৷
চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান প্রোফেসর হ্যার্বার্ট প্লিশকে তার সহকর্মীদের সঙ্গে বাভেরিয়ার এক জলপ্রপাতে পরিমাপের কাজ চালাচ্ছেন৷ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে তারা গবেষণা করছেন৷ সেই লক্ষ্যে তারা অতি বেগুনি রশ্মি মাপছেন৷ প্লিশকে বলেন, এখানে একদিকে দৃশ্যমান রশ্মি দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে ইউভি-এ এবং ইউভি-বি-র অংশও রয়েছে৷ স্বাস্থ্যের উপর এই দুই রশ্মির বিশেষ প্রভাব রয়েছে৷ তার কিছুটা ইতিবাচক, কিছুটা নেতিবাচক৷
শক্তিতে ভরপুর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি মানুষ দেখতে পায় না, অনুভবও করতে পারে না৷ তবে অতি বেগুনি রশ্মি ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে৷ চোখে কনজেক্টিভাইটিস এবং কর্নিয়ার প্রদাহও ঘটাতে পারে৷ তবে সেটির কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে৷ হ্যার্বার্ট প্লিশকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মির মাধ্যমে সূর্য ত্বকে ভিটামিন ডি সৃষ্টি করে৷ শরীরের ক্যালসিয়াম ভারসাম্যের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ হাড়গোড়ের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি৷ অর্থাৎ অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে শরীরে যথেষ্ট মাত্রায় ভিটামিন ডি প্রয়োজন৷ সূর্যের আলো পেলে তবেই সেটা সম্ভব৷
চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অতিবেগুনি রশ্মি কাজে লাগানো হয়৷ যেমন ক্লাউস লাঙে ১৫ বছর ধরে সোরিয়াসিস রোগে ভুগছেন৷ ক্রনিক এই ত্বকের রোগের কারণে চুলকানি ও প্রদাহ দেখা যায়৷ ক্লাউস বলেন, অস্বস্তি দূর করতে চুলকানোর প্রবল ইচ্ছা জাগে৷ অবশ্যই সেটা করা উচিত নয়৷
চিকিৎসার শুরুর সময় ক্লাউস লাঙের শরীর এমন দেখতে ছিল৷ আজ সোরিয়াসিসের চিহ্ন প্রায় চোখেই পড়ে না৷ ‘সিঙ্ক্রোনাস বালনিওফোটোথেরাপি’র সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে৷ এর আওতায় রোগীকে লবণাক্ত পানিভরা আধারে শুয়ে পড়তে হয়৷ সে সময়ে তার উপর কৃত্রিম অতিবেগুনি রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়৷ লবণের সাহায্যে সেই রশ্মি আরও ভালোভাবে ত্বকে প্রবেশ করে৷ সেই প্রভাব ‘অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি’, অর্থাৎ প্রদাহ মোকাবিলা করে৷ লবণ ত্বকের ক্ষত দূর করতেও সাহায্য করে৷
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টফ লিবলিশ বলেন, সোরিয়াসিস নিরাময় করা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ রোগীরা সপ্তাহে তিন বার পর্যন্ত আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন৷ সাধারণত ২৫টি থেরাপির পর আমরা উন্নতি লক্ষ্য করি৷ কোনো কোনো রোগীর ৭০টি পর্যন্ত সেশনের প্রয়োজন হয়৷ সেটা রোগীর উপর নির্ভর করে৷ একবার স্থিতিশীল হলে তখন আর এত ঘনঘন রশ্মি নিক্ষেপের প্রয়োজন হয় না৷
নিউরোডার্মাটাইটিস বা ভিটিলিগো রোগের ক্ষেত্রেও এই থেরাপি কাজে লাগতে পারে৷ ক্লাউস লাঙে আপাতত ছুটি পেয়েছেন৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার খুবই ভালো লাগছে৷ থেরাপি সম্পর্কে খুবই সন্তুষ্ট, বেশ কাজে লেগেছে৷ দেখছেন, ক্ষতগুলি প্রায় দূর হয়ে গেছে৷
কয়েক মাস পর তাকে আবার এক থেরাপি সেশন করাতে হবে৷ এদিকে হ্যার্বার্ট প্লিশকে ও তার সহকারী আরও পরিমাপ চালিয়েছেন৷ অতিবেগুনি রশ্মির আরেকটি প্রভাবও রয়েছে৷ প্লিশকে বলেন, গ্রীষ্মকালে আমরা সবসময়ে ভাইরাল রোগের তেমন প্রকোপ দেখি না৷ সূর্যের রশ্মির সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে৷ অবশ্যই একাধিক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে বটে, তবে প্রাকৃতিক ইউভি-বি ও ইউভি-এ রশ্মি ভাইরাসও খতম করে৷
সূর্য ছাড়া আমাদের পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়৷ সূর্য আমাদের মনে আনন্দ দেয়, ইতিবাচক প্রভাব রাখে৷ তবে সূর্যের আলো শুধু নির্দিষ্ট মাত্রায় উপভোগ করা উচিত৷ সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাও জরুরি৷ সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে