বিশ্ব-পরিস্থিতি এখন একটি পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন ও রাশিয়া বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণের ব্যাপারে সক্রিয় হতে শুরু করেছে প্রায় দশককাল আগে থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূ-রাজনৈতিকভাবে রুশ-চীন অক্ষ আরো চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা নিতে শুরু করে। এর একটি বড় ধরনের অবয়ব নেয়ার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বিশ্বকে একটি সুস্পষ্ট মেরুকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান এখনো শেষ হয়নি। তবে এই যুদ্ধে কোনো পক্ষ সিদ্ধান্তকারী সাফল্য পাবে বলে মনে হয় না। পুরো ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রচেষ্টা প্রথম ধাপে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন দনবাস অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দ্বিতীয় দফার লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাশিয়া লড়াই করছে। সেখানেও প্রবল প্রতিরোধের কারণে রাশিয়া জয় পাবে কি না সংশয় রয়ে গেছে। এই যুদ্ধের জয়-পরাজয় নিষ্পত্তিহীন রেখেই শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা তৈরি হতে পারে। তবে এই সমঝোতা যাই হোক না, পরবর্তী বিশ্বরাজনীতি ও মেরুকরণে তা বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। এই যুদ্ধের আগে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যে সম্পর্ক ও লেনদেন চলে আসছিল তা আর ফিরে আসবে বলে মনে হয় না।
রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে চীন, রাশিয়াকে সীমিত সমর্থন জোগালেও যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অংশীদার ছিল না। ফলে নতুন স্নায়ুযুদ্ধে চীনের সাথে পশ্চিমা শক্তির চূড়ান্ত শত্রুতা সৃষ্টির মতো মেরুকরণ এখনো তৈরি হয়নি। তবে সেই মেরুকরণের একটি সম্ভাবনা রয়েছে তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে। তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে কথামালা বা হুমকি উচ্চারণের পর্ব পেরিয়ে সামরিক মহড়াপর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পরিণতি নিয়ে বেইজিং যথেষ্ট সতর্ক হলেও তাইওয়ান ইস্যুটি চীনের জন্য সমঝোতার অযোগ্য বিষয়। এর স্থিতাবস্থা বজায় রেখেই কেবল সঙ্কটটিকে পেছানো যেতে পারে। ইউক্রেন ইস্যুর মতো তাইওয়ান ইস্যুর একটি নিষ্পত্তি আগে বা পরে হবে। চীনা নীতি নিয়ে আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের সাম্প্রতিক নমনীয় মন্তব্যে মনে হতে পারে মারাত্মক এক পরিণতির মধ্য দিয়ে যাওয়া বিশ্বে আরেকটি প্রলঙ্করী যুদ্ধ বাধাতে চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের মনোভাবও একই রকম বলে মনে হয়।
এখন প্রশ্ন হলো- এই নতুন বিশ্ব-পরিস্থিতিতে মুসলিমবিশ্বের প্রতি দুই পক্ষের দৃষ্টিকোণ কী হবে? এর প্রভাব কতটা কিভাবে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যে? পুরনো ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পরবর্তী সময়টি ইসলামিক দুনিয়ার জন্য ছিল সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়কর। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র বলয় তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় ক্ষেত্রে পরবর্তী দুনিয়ায় ইসলামকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে। দ্বিতীয় জর্জ বুশের আমলে বিশ্বব্যাপী যে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ লড়াইয়ের সূচনা করা হয় তার আওতায় আফগানিস্তান ও ইরাকে অভিযান চালানো হলো। মধ্যপ্রাচ্যে দুই মুসলিম শক্তিধর দেশ ইরান ও সৌদি আরবের সাথে দ্বন্দ্ব- সঙ্ঘাত স্থায়ী রূপ দেয়ার নানা আয়োজন ছিল। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সঙ্ঘাতে নানাভাবে জড়িয়ে যায় তুরস্কের মতো দেশও। সর্বশেষ, আরব বসন্তকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে শাসক পক্ষ এবং জনপ্রিয় ইসলামিস্টদের মধ্যে অস্তিত্বের লড়াই তৈরি করা হয়।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান প্রশাসনের বিদায়ের পর জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করে। বাইডেনের নতুন সময় আমেরিকান পররাষ্ট্র দৃষ্টিভঙ্গিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সঙ্কেত আগে থেকেই দেয়া হয়েছিল। আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পর ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সক্রিয়তাবাদী ভূমিকা পুরো পশ্চিমা শক্তিকে নতুন মেরুকরণে নিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো- নতুন এই ধারায় ইসলামিক বিশ্বের ব্যাপারে কী দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে পাশ্চাত্যের আর রুশ-চীন অক্ষের মনোভঙ্গি এই শক্তির প্রতি কেমন কী হতে পারে আর এর প্রভাব ইসলামী আন্দোলন যাদেরকে পশ্চিমা শক্তি ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর কেমন হতে পারে, এ নিয়ে দু’টি পর্বে আলোচনা করা হবে। আজ এর প্রথম পর্বে আলোকপাত করা হবে, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ইসলামের ওপর নতুন মেরুকরণের কী প্রভাব পড়তে পারে। আর মুসলিমবিশ্বের এই কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎইবা কী হতে পারে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হবে দক্ষিণ ও পূর্ব এশীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। সবশেষে আলোচনা হবে বিবদমান দুই বিশ্বপক্ষের ইসলামিস্টদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
কঠিন পরিস্থিতি ও বাস্তবতা
ইসলামী আন্দোলনগুলো এখন সম্ভবত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। আরব অভ্যুত্থানে ইসলামিস্টদের রাজনৈতিক শক্তি দৃশ্যমান হওয়ার পর, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং অন্যান্য সুন্নি রাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন সামরিক অভ্যুত্থান, নির্বাচনী পরাজয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং চরম দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। তারা এ ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি আগেও হয়েছিল, তবে ঐতিহাসিকভাবে ইসলামী সংগঠনগুলো স্থিতিস্থাপক এবং জনজীবনে ফিরে আসতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস পরীক্ষা করে চরম বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধার করার জন্য নয়টি মূল প্রক্রিয়া চিহ্নিত করা যায়, যা এই প্রত্যাবর্তনগুলোকে সহজতর করেছিল। প্রশ্ন হলো- এই কারণগুলোর মধ্যে কোনটি আজ কার্যকর হতে পারে।
২০১১ সালের আরব বিদ্রোহের পর থেকে, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব সুন্নি ইসলামী আন্দোলনগুলো তাদের নির্বাচনী বিজয়ের ফল সামাজিক মেরুকরণ, দমন, অভ্যুত্থান এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে হারিয়ে যেতে দেখেছে। এখন মনে হচ্ছে যে, ইসলামী আন্দোলনগুলোর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব হ্রাস পেতে থাকবে যদিও মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ সমাজ সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল থাকে, ধর্মীয় প্রতীকগুলো দুর্দান্ত শক্তি এবং অনুরণন ধরে রাখে। এই অঞ্চলজুড়ে বিপর্যয়কর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সংহতি এবং অস্থিতিশীলতার পুনরাবৃত্তিকে প্রায় অনিবার্য করে তোলে। এটি একটি জনতাবাদী যুগ এবং ইসলামী আন্দোলনগুলো ঐতিহ্যগতভাবে এই জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য ভালো অবস্থানে থাকে।
ইসলামপন্থীরা অতীতেও বিধ্বংসী অবস্থা থেকে দ্রুত ফিরে আসার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে ব্রাদারহুডের ওপর নাসেরবাদী দমন সংগঠনটিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। ব্রাদারহুডের পুনরুত্থান হতে বেশি সময় লাগেনি যখন সাদাত ইসলামপন্থীদের কারাগার থেকে বের করে আনেন এবং নাসেরবাদী ও বামপন্থীদের প্রতিশক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য তাদের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে উৎসাহিত করেন।
তিউনিসিয়ায়, ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে বেন আলি শাসনের দ্বারা এন্নাহদা আন্দোলন মূলত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু সামাজিক পরিষেবা, জনসাধারণের উপস্থিতি বা শক্তিশালী সংগঠনের অভাব সত্ত্বেও ২০১১ সালে নির্বাচনে প্রধান শক্তি হিসোবে ফিরে আসে দলটি।
সিরিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে আসাদ সরকার দ্বারা পিষ্ট এবং নির্বাসিত হওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালে রাজনৈতিক সংগ্রামে একটি অগ্রণী ভূমিকা নেয়। ইরাকি ইসলামপন্থীরা ২০০৩ সালের পর সাদ্দাম হোসেনের শাসনের দ্বারা দমন হওয়া সত্ত্বেও সুন্নি রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা নেয়।
অতীতের তুলনায় ইসলামী আন্দোলনে বর্তমানে বেশ কিছু মূল সুবিধার অভাব রয়েছে। এখন এমন কোনো শক্তিশালী বাম বা পপুলিস্ট আন্দোলন নেই, যার বিরুদ্ধে শাসকরা ইসলামপন্থীদের একটি কার্যকর অস্ত্র হিসেবে খুঁজে নিতে পারে; বিপরীতে, এখনো ইসলামপন্থীদের প্রাথমিক হুমকি হিসেবে দেখে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসলামিস্টদের পুনরুত্থানের জন্য সরাসরি সহায়তা ছিল উপসাগরীয় দেশগুলোর। এখন এই শক্তি ইসলামিস্টদের প্রতি গভীরভাবে বিদ্বেষী এবং সম্ভবত এই ধরনের আর্থিক প্রবাহকে আটকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মিসরের মতো দেশগুলো এখন সামাজিক পরিষেবা আউটসোর্স করতে বা ইসলামপন্থীদের সীমিত রাষ্ট্র ক্ষমতার জায়গাগুলো পূরণ করার অনুমতি দিতে ইচ্ছুক নয়। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের বেশির ভাগ জীবিত নেতা এবং প্রবীণ সদস্যরা কারাগারে বা নির্বাসনে রয়েছেন, এটি সমাজের সাথে সংযোগ পুনর্নির্মাণ করাকে বেশ কঠিন করে তোলে।
তা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক ইসলাম একটি প্রকল্প হিসেবে অনেক পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মনে হলেও এটির আরো ভালো পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক অঞ্চলজুড়ে শাসন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চলমান ব্যর্থতা ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। অনেক আরব দেশে সমাজসেবার নেটওয়ার্কে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। মিসরের মতো দেশে তাদের দমন-পীড়নের গভীরতা এখন রাষ্ট্রের ওপর এই ধরনের পরিষেবা প্রদানের চাপ সৃষ্টি করেছে, যা রাষ্ট্রীয় মেকানিজমে স্পষ্টতই করা সম্ভব হয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি তার বিভিন্ন প্রকাশে পপুলিজমের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল। এই পরিবেশে ইসলামপন্থীদের ঐতিহাসিকভাবে জনসমর্থন লাভ করতে সক্ষম হতে দেখা গেছে।
পুনরুজ্জীবনের ঐতিহাসিক চলক
ইসলামী আন্দোলন এবং বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিস্থাপক বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো- কিভাবে এই ইসলামী আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হয়? এই পুনরুজ্জীবনে বেশ ক’টি ঐতিহাসিক চলক লক্ষ করা যায়।
প্রথমত, রাজনৈতিক অভিযোজনযোগ্যতা। ইসলামপন্থীরা রাজনৈতিক উন্মুক্ততা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সামাজিক প্রয়োজন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবনতিতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেয়। মিসরে সাদাতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতিগুলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অসুবিধা সৃষ্টি করেছিল, যখন তার বেসরকারীকরণ স্বাধীনভাবে প্রদত্ত সামাজিক পরিষেবার প্রয়োজন তৈরি করে। মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরীয় রাষ্ট্রের খালি করা সামাজিক পরিষেবার জায়গাগুলো আংশিকভাবে পূরণ করার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এতে মধ্যবিত্ত শহুরে সমাজের মধ্যে সংগঠনটি গভীরভাবে এবং ইতিবাচকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
মরক্কোর পিজেডি ২০১১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর কয়েকবার সরকার গঠন করে। তারা বিরোধী প্রতিবাদী জোটের মূল অংশগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে এবং নতুন সাংবিধানিক সংস্কারকে বৈধতা দেয়ার জন্য কাজ করে। বাহরাইনের ইসলামপন্থীরা রাজতন্ত্রকে ২০১১ সালের গণ-অভ্যুত্থান থেকে বাঁচতে সাহায্য করে, যার ফলে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে বৃহত্তর উপসাগরীয় নেতৃত্বাধীন আক্রমণ থেকে তারা সুরক্ষা পেয়েছিল। এমনকি আলজেরিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুডও ২০০০-এর দশকে একটি নিরাপদ, এমনকি নিয়ন্ত্রিত, ইসলামপন্থী পার্টির প্রস্তাব দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বাস নেটওয়ার্ক এবং সুনামগত সুবিধা। ইসলামী আন্দোলনগুলো তাদের সম্মিলিত পরিচয়, ধর্মীয় বার্তাপ্রেরণ এবং সামাজিক উপস্থিতিতে মূল বিশ্বাস এবং সুনামমূলক সুবিধার উচ্চ বিকশিত নেটওয়ার্কগুলোর ওপর নির্ভর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তিউনিসিয়ায়, এমনকি এন্নাহদা নির্মম দমন-পীড়নের শিকার হওয়ার পরেও, এর বেশির ভাগ নেতৃত্ব নির্বাসনে বা কারারুদ্ধ হওয়ার পরেও তারা তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মানিত ছিল।
তৃতীয়ত, প্রবাসে নিজেদের সংগঠিত করা। প্রবাসীরা নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন, মতাদর্শগত পুনর্বিবেচনা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত চিন্তাভাবনার সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ এনে দেয়। সিরিয়া এবং ইরাকে, মুসলিমরা বিদেশে নির্বাসিত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে। ইরাকি ইসলামিক পার্টি ২০০৩-পরবর্তী ইরাকি সরকারে এমন একটি ভূমিকা নিয়েছিল যা একটি রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। সিরিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের বিদ্রোহের সমন্বয় ও নেতৃত্ব দেয়ার জন্য গঠিত সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলে একটি ভূমিকা নিতে কাতার এবং তুরস্কের সমর্থনের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব সাংগঠনিক দক্ষতা ব্যবহার করে। তিউনিসিয়ার এন্নাহদা তাদের বর্ধিত নির্বাসনের সুযোগ নিয়েছিল অন্যান্য রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য।
চতুর্থত, মিডিয়া এবং মেসেজিং। যেখানে মাঠে সংগঠন করা কঠিন ছিল সেখানেও ইসলামী সংগঠনগুলো শক্তিশালী মিডিয়া উপস্থিতি বজায় রেখেছিল। আলজাজিরার সূচনা ইসলামপন্থীদেরকে অন্যান্য রাজনৈতিক প্রবণতার পাশাপাশি স্বাগত জানিয়েছে, যা ২০১১ সালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামপন্থীরা ১৯৭০-এর দশকে ম্যাগাজিন এবং ক্যাসেট টেপ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়েবসাইট এবং সোস্যাল মিডিয়ার নতুন মিডিয়া ফর্মগুলোর প্রাথমিক এবং সফল ব্যবহারকারী ছিল।
পঞ্চমত, বিরোধিতার সুবিধা। ক্ষমতাসীন জোট এবং অভিজাত পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে, তারা স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতার জন্য একটি খ্যাতি বজায় রাখতে পারে। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ফলাফলের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই, তারা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিতার দাবিতে একটি বার্তা উপস্থাপন করতে পারে।
ষষ্ঠত, কৌশলগত সংযম। ইসলামী সংগঠনগুলো সহিংস ধরনের জিহাদি বিদ্রোহ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান থেকে কৌশলগতভাবে লাভবান হতে পারে। সহিংস জিহাদিদের অস্তিত্ব একটি অহিংস বিকল্প প্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যা তাদের মূলধারা এবং নীতি দর্শকদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল। ব্রাদারহুড নিজেকে মৌলবাদের বিরুদ্ধে ফায়ারওয়াল এবং উগ্র ধারার জিহাদি প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য একটি শক্তিশালী বাধা হিসেবে উপস্থাপন করেছিল।
সপ্তমত, সাংগঠনিক শক্তি। মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনগুলোকে দমন-পীড়নের মধ্যে টিকে থাকার জন্য উপযোগী করা হয়েছিল। এর সাংগঠনিক ক্ষমতা চরম চাপের মধ্যেও স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত হয়েছে, এমনকি খুব কম সক্রিয় কর্মী সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গোপনে কাজ করার জন্য একটি সংযোগ হিসেবে কাজ করেছে।
অষ্টমত, অর্থায়ন। ইসলামী পুনরুজ্জীবনের বস্তুগত মাত্রাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসলামপন্থীরা তেলের ‘বুম’কে দারুণ সুবিধার জন্য কাজে চালাতে সক্ষম হয়েছিল। তেলসম্পদ এই অঞ্চলের চার পাশের ইসলামপন্থীদের কাছে একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছিল। শ্রম, রেমিট্যান্স, ইসলামী ব্যাংক, মসজিদ এবং ধর্মীয় উপকরণগুলোতে সরাসরি সৌদি পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
নবমত, আদর্শগত সংশোধন। ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গুরুতর দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল। এ কারণে তারা মতাদর্শগত অভিযোজনের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, যা তাদের পুনরুজ্জীবনের সুবিধা এনে দেয়।
পুনরুজ্জীবনের এখনকার সম্ভাবনা
ইসলামপন্থীদের জন্য বর্তমান অবস্থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হতে পারে; কিন্তু ইসলামিস্টরা এর আগে চরম দমন ও প্রান্তিকতার সময় থেকে ফিরে এসেছে। আগে আলোচিত নয়টি কারণ যুক্তিযুক্তভাবে ইসলামী পুনরুজ্জীবনের পূর্ববর্তী ঐতিহাসিক পর্বগুলোতে অবদান রেখেছিল। এই কারণগুলো কি এখনো কাজ করবে?
প্রথমত, অভিযোজনযোগ্যতা। মধ্যপ্রাচ্য একটি গভীর উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটে রয়ে গেছে, যেখানে কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সঙ্কট আরো বেড়েছে, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জনপ্রিয় সমাবেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে হচ্ছে। ইসলামবিরোধী স্বৈরাচারীরা ২০১৩-পরবর্তী কর্তৃত্ববাদী পুনঃস্থাপনের স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করছে, যাতে মুসলিম ব্রাদারহুডের কোনো উত্তরসূরি পুনরায় আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ না পায়। সরকারের ব্যাপারে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষোভ ও জন-অসন্তোষ যে পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে, ইসলামপন্থীরা কার্যকরভাবে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করতে পারবে বলে মনে হয়।
দ্বিতীয়ত, খ্যাতি এবং বিশ্বাস। ইসলামপন্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে ইসলামিক আদর্শ ধারণ করার প্রতীক হিসেবে বার্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধার অনেকগুলো গত দশকের দমন-পীড়ন দ্বারা অবনমিত হয়েছে, তবে সবগুলো নয়। বেশির ভাগ আরবসমাজই রক্ষণশীল এবং ধর্মীয় ও নৈতিক আবেদনের প্রতি অনুরক্ত। এখানকার মসজিদগুলো বার্তা প্রচারের জন্য ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে চলেছে।
তৃতীয়ত, নির্বাসিত পরিবেশ। বিদেশে মুসলিম ব্রাদারহুড আজ সিরিয়ান, তিউনিসিয়ান এবং মিসরীয় ব্রাদার্সের আগের প্রজন্মের চেয়ে ভিন্ন পরিবেশের মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান এবং তহবিল সংগ্রহের সুযোগ, শক্তিশালী ধর্মীয় নেটওয়ার্ক এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে নিরাপদ আশ্রয়স্থল নেই। গত দশকের মেরুকরণ থেকে উদ্ভূত গভীর অবিশ্বাস ব্রাদারহুডের জন্য অ-ইসলামীদের সাথে সম্পর্ক বা বিরোধী জোট তৈরি করা আরো কঠিন করে তোলে। ব্রাদারহুড নির্বাসিতরা তুরস্ক, কাতার এবং সুদানের মতো কয়েকটি অবশিষ্ট বিকল্পে স্থানান্তরিত হয়ে স্বাগতিকদের বৈদেশিক নীতি এমনকি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়ে। মিসরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের জন্য, ২০২১ সালের শেষের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্ক ও কাতার উভয়ের মধ্যে অপ্রত্যাশিত পুনর্মিলনের কারণে বিদেশে তার পুনর্গঠিত উপস্থিতি কিছুটা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
চতুর্থ, মিডিয়া। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মেরুকরণ এবং অনলাইন স্পেস ও রাজনৈতিক জনসাধারণের ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতা আগের তুলনায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এরপরও, ইসলামপন্থীদের জন্য সম্ভাবনাগুলো উজ্জ্বল হতে পারে।
পঞ্চম, বিরোধিতার সুবিধা। গত দশকের অভিজ্ঞতায় সাধারণভাবে দেখা যায় যে, ইসলামপন্থীরা প্রশাসনে খুব ভালো করতে পারে না, তবে তারা বিরোধী দল হিসেবে ভালো করে। মিসরীয় মুসলিম ব্রাদারহুড একেবারে স্বল্পসময় ক্ষমতায় থাকলেও শাসন ব্যবস্থায় খুব একটা সফল হয়নি। তিউনিসিয়া এবং মরক্কো উভয় ক্ষেত্রেই, দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাথে সরকারে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে না পারা ইসলামপন্থী আন্দোলনের খ্যাতি নষ্ট করেছে। তাদের ভাগ্যের পতন শুধু মেরুকরণের কারণে নয়; বরং শাসন ক্ষমতায় ব্যর্থতা হিসেবেও দেখা হয়। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হলো যে, বিরোধী দলে ফিরে যাওয়া এই আন্দোলনগুলোর জন্য ছদ্মবেশে একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে এবং ক্ষমতায় থাকা অ-ইসলামীদের ওপর জনপ্রিয় ক্ষোভে ফোকাস করতে পারে।
ষষ্ঠত, কৌশলগত সংযম। গত এক দশকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর এবং অন্যরা মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর আদর্শকে উগ্রবাদ হিসেবে হাইলাইট করে একটি আদর্শিক আক্রমণ চালিয়েছে। এই টেকসই প্রচার-প্রচারণা, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে বাস্তব রাজনৈতিক মেরুকরণের সাথে মিলিত হয়েছে। ব্রাদারহুড এবং অন্য ইসলামী সংগঠনগুলোর একটি মধ্যপন্থী বিকল্প হিসেবে নিজেদের অবস্থান করার ক্ষমতাকে শাসকরা খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইসলামপন্থীরা নিজেরাই কঠোর দমন ও রাজনৈতিকভাবে কিছুটা ব্যর্থতার মুখেও অহিংস ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি অঙ্গীকার বজায় রেখেছে।
সপ্তমত, সাংগঠনিক ক্ষমতা। মিসরীয় মুসলিম ব্রাদারহুড স্পষ্টতই সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হয়েছে। হাজার হাজার সদস্যের হত্যা, গ্রেফতার এবং নির্বাসন, এর আর্থিক ও অবকাঠামোগত সম্পদের বিশাল অংশ বাজেয়াপ্ত করা আর শাসকদের ক্রমাগত চাপ মিসরীয় ব্রাদারহুডকে বিপন্ন করেছে। তবুও ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা দেখায় যে, এর ক্যাডারদের শক্তিশালী সামাজিকীকরণ, সেই সাথে শক্তিশালী আস্থার নেটওয়ার্কে আবদ্ধ সদস্যরা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের বিকল্প হতে পারে। তিউনিসিয়ার এন্নাহদা এবং মরক্কোর পিজেডি তাদের রাজনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সন্ত্রাসবাদের উপাধি সত্ত্বেও, বাহরাইন এবং কুয়েতে ব্রাদারহুড শাখাগুলো স্বাভাবিক হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অষ্টমত, অর্থায়ন। সৌদি আরবসহ একাধিক উপসাগরীয় রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা নাটকীয়ভাবে পূর্ববর্তী যুগে ইসলামপন্থীদের অর্থায়নের একটি উৎস বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারি আর্থিক সহায়তা প্রবাহিত হচ্ছে এখন সালাফি সংগঠনগুলোতে, যেগুলো মূলত কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতি আনুগত্যকে মডেল করেছে। প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স সম্ভবত আগের স্তরে ফিরে আসবে না। তবে এখন পশ্চিমা দেশগুলোতে বিকল্প কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে।
নবমত, আদর্শগত সংশোধন। ইসলামপন্থীদের পদমর্যাদার মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে উল্লেখযোগ্য পুনর্বিবেচনা চলছে; কিন্তু মৌলিকভাবে নতুন দিকনির্দেশনার উল্লেøখযোগ্য লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। সংগঠনগুলো আগের মতোই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রবীণ নেতাদের সাথে রয়েছে। কিছু অল্পবয়সী ইসলামপন্থী নতুন পরিচয় এবং কৌশল খুঁজছে। কিন্তু এই সংশোধনগুলো কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা স্পষ্ট নয়। এই দিক থেকে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টাটি এসেছে রশিদ ঘানুশি এবং এন্নাহদা থেকে, যেটি রাজনৈতিক ইসলামের পরিবর্তে মুসলিম গণতন্ত্রের একটি দল হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছে। এই পুনঃব্র্যান্ডিং অ-ইসলামবাদী তিউনিসিয়ানদের আস্থা অর্জনে তেমন কিছু করেনি, সাইয়েদের অভ্যুত্থান থেকেও রক্ষা করতে পারেনি।
উপসংহার
এর মধ্যে শীর্ষ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব বিরোধ একপাশে সরিয়ে রেখে একটি সাধারণ ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে সৌদি আরব-ইরান আলোচনা চলছে। সৌদি আরব আমিরাত মিসর এমনকি সিরিয়ার সাথেও বিরোধের নিষ্পত্তি করতে চাইছে তুরস্ক। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের এই ঐক্য জনগণ পর্যায়ে একটি স্বস্তি ও স্বাধীনতা নিয়ে আসতে পারে। মধ্যপন্থী ইসলামিস্টরা এর পথ ধরে আবার সীমিত রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে শুরু করবে বলে মনে হয়।
এ ক্ষেত্রে সব দেশে পরিবর্র্তনের মাত্রা হয়তো একরকম হবে না। তিউনিসিয়া লিবিয়া মরক্কো আলজেরিয়া বেল্টে ইসলামিস্টদের শক্তিশালী অবস্থান ফিরে আসাটা দ্রুততর হতে পারে। সুদানেও বৈরী অবস্থার অবসান ঘটে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারা। জর্দানের বিভক্তি ঘুচে গিয়ে আবারো ভালো এক অবস্থান তৈরি হতে পারে ইসলামিস্টদের জন্য। মিসরে দমন-পীড়নের চূড়ান্ত পর্ব অতিক্রান্ত হওয়ায় এখন নতুন করে শক্তি সঞ্চয় শুরু হতে পারে ব্রাদারহুডের। ইয়েমেনে যুদ্ধ বিরতি হলে আল-ইসলাহ আবার নতুন যাত্রা আরম্ভ করতে পারে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধান ইসলামিস্টদের জন্য নতুন একটি ভূমিকা তৈরি করতে পারে। তবে ইরাকে বর্ণগত বিভক্তি এক জটিল অবস্থায় থেকে যেতে পারে।
সার্বিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশে ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের অর্থনৈতিক দুর্দশা জনগণের মধ্যে ইসলামিস্টদের প্রতি সমর্থনকে নতুন ভিত্তি দিতে পারে। দ্রুত নাটকীয় পরিবর্তন না হলেও চলতি দশকের শেষার্ধ হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিস্টদের জন্য নতুন উত্থানপর্ব। এই পর্বের রূপান্তর সঙ্ঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতামূলক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হয়।