জ্বালানি তেলের ‘মজুদ ট্যাংক’ নির্মাণ বাকি রেখেই উদ্বোধন হতে পারে ‘বাংলাদেশ-ভারত পাইপলাইন প্রকল্প’। প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সময়মতো নির্মাণসামগ্রী আমদানি করতে না পারায় ট্যাংক বসাতে দেরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তেল মজুদের জন্য পুরনো ট্যাংক ব্যবহারের চিন্তাভাবনা চলছে।
আগামী জুনে পাইপলাইনটি উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ প্রকল্পের অধীনে পাবর্তীপুরে ‘রিসিপ্ট টার্মিনালের’ জমিতে পাঁচ হাজার ৬৯০ লিটার ধারণ ক্ষমতার ছয়টি ট্যাংক এবং তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি ট্যাংক নির্মাণের কথা। কিন্তু জুনের মধ্যে এসব ট্যাংক নির্মাণ সম্পন্ন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, টেন্ডার অনুযায়ী ট্যাংক নির্মাণের মালামাল আনতে অপারগতা প্রকাশ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘পাইপল লাইনার্স লিমিটেড’। দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা টেন্ডারের বাইরে দর সংশোধনের আলোচনা করে। সেটা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ট্যাংক নির্মাণের জন্য ‘স্টিলপ্লেট’ আমদানি করে। কিন্তু ‘স্টিলপ্লেট’ সময়মতো আমদানি করতে না পারায় ট্যাংক নির্মাণ পিছিয়ে পড়ে।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সময়মতো ট্যাংকগুলো নির্মাণ করতে।’
প্রকল্প পরিচালক মো. টিপু সুলতান আমাদের সময়কে বলেন, ‘রিসিপ্ট টার্মিনাল এলাকায় নতুন ট্যাংক নির্মাণ না হওয়ায় আমরা আপাতত পুরনো ট্যাংকারে জ্বালানি তেল রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। অন্যদিকে একটু দেরি হলেও ঠিকাদার স্টিলপ্লেট আমদানি করেছে। উদ্বোধনের আগেই ট্যাংক নির্মাণ সম্পন্নের চেষ্টা চলছে। নাহলে পুরনো ট্যাংকারে তেল রাখা হবে।’
২০১২ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের প্রস্তাব দেয় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড’ (এলআরএল)। এ প্রস্তাব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়। এর পর দুই দেশের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপন করে ভারত থেকে জ্বালানি তেল
বিশেষ করে ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন-২০১০’-এর আওতায় এলআরএল’র শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) নির্মাণ করা হবে।
২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেরও দুই বছর পর ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় মাঠপর্যায়ের কাজ। ২০২২ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। এখনো কোথাও কোথাও বাকি রয়েছে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। নির্মাণ হয়নি প্রধান স্থাপনা ‘মজুদ ট্যাংকার’। এ ছাড়া সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহ এবং পার্ববতীপুরের ‘রিসিপ্ট টার্মিনাল’ নির্মাণ নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ১৩১ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১২৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পড়েছে বাংলাদেশে। এ পাইপলাইন গেছে পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারীর মধ্য দিয়ে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দুটি কোম্পানি পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ‘দীপন গ্রুপ’ ও ভারতের ‘ক্রোটেক’। পাইপলাইন দিয়ে ১৫ বছর তেল আমদানি করা হবে। প্রথম তিন বছর দুই লাখ টন, পরবর্তী তিন বছর তিন লাখ, পরবর্তী চার বছর পাঁচ লাখ, অবশিষ্ট পাঁচ বছর ১০ লাখ টন তেল আমদানির কথা রয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অংশে পাইপলাইনের জন্য প্রায় ১৪৭ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে হুকুম দখল করতে হবে ১২৬ দশমিক ১৪ একর। পাইপলাইন রুটে তিনটি জেলার মধ্যে পঞ্চগড়ে ১২১ একর, দিনাজপুরে ৫২ একর এবং নীলফামারীতে ১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। পঞ্চগড়ে হুকুম দখল করতে হবে ৮২ একর, দিনাজপুরে ৩৩ একর এবং নীলফামারীতে ৯ একর।
পাইপলাইন বাংলাবান্ধা থেকে পার্বতীপুর যাওয়ার পথে একাধিক নদী, সড়ক ও রেলপথ অতিক্রম করছে। বিআইডব্লিউটি-এর অধীনে চারটি নদীর (তিস্তা, ইছামতী, করতোয়া ও ডাউক) ৬টি পয়েন্ট, রেলওয়ের অধীনে ৩টি পয়েন্ট, সড়ক ও জনপথের চারটি পয়েন্ট এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২৮ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ভারত সরকার ‘গ্রান্ড ইন এইড’ কর্মসূচির আওতায় ৩০৩ কোটি রুপি অর্থায়ন করবে। বাংলাদেশ ব্যয় করবে ৩০৬ কোটি টাকা।