বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণ বা নগর দারিদ্র কোনও বিবেচনাতেই বরিশালের অবস্থান ভালো নয়। এ বিভাগে মোট জনসংখ্যার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশই দরিদ্র, যা জাতীয় হারের অনেক বেশি। জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্রের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বরিশালের পর এ সূচকে রয়েছে রংপুর বিভাগ।
অন্যদিকে, দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগের ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। অতি দারিদ্র্যের হিসাবে ঢাকার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ অতি দারিদ্র্যের বাস এ বিভাগে। গ্রামীণ অতি দারিদ্র্যও ঢাকায় সবচেয়ে কম, মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মৌলিক চাহিদা পূরণ করার মতো আয় যারা করতে পারে না, তারা দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়। মৌলিক চাহিদা পূরণ করে এমন ভোগ্যপণ্যের একটি তালিকার ভিত্তিতে বিবিএস জরিপ করে থাকে।
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, অতি দারিদ্র্যের দিক থেকেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বরিশাল। এ বিভাগের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ অতি দারিদ্র্য। অতি দারিদ্র্যের জাতীয় হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ, বরিশালে অতি দারিদ্র্যের হার দেশের গড় দারিদ্র্যের হারের দ্বিগুণেরও বেশি।
গ্রামীণ অতিদারিদ্র্যও সবচেয়ে বেশি বরিশালে। ১৩ দশমিক ১ শতাংশ গ্রামীণ অতি দারিদ্র্য বরিশালে বসবাস করে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিভাগের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। এ বিভাগে এ ধরনের দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৯ শতাংশ। গ্রামীণ অতি দারিদ্র্যের জাতীয় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
সার্বিকভাবে বরিশাল বিভাগে গ্রামের ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামীণ দারিদ্র্যের দিক থেকে সবেচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে খুলনা। এ বিভাগের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এ ধরনের দরিদ্র। নগর দারিদ্র্য এবং নগর অতি দারিদ্র্যের হিসাবে বরিশাল বিভাগের সামনে রয়েছে রংপুর বিভাগ। রংপুরে নগর দারিদ্র্য ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ। বরিশালে এ হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। নগর দারিদ্র্যের জাতীয় হার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, নগর অতি দারিদ্র্যের দিক থেকেও বিভাগগুলোর অবস্থান প্রায় একই রকম। এ ধরনের দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে। সেখানে এ হার ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ নগর অতিদারিদ্রের হার নিয়ে বরিশালের অবস্থান তৃতীয়। নগর অতিদারিদ্রের জাতীয় হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয় বেড়েছে বেশি হারে
সবচেয়ে বেশি আয়ের পাঁচ শতাংশ মানুষের আয় গত ছয় বছরে যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক কম হারে বেড়েছে সবচেয়ে কম আয়ের পাঁচ শতাংশ মানুষের আয়। জাতীয় পর্যায়ে আয়ের অনুপাত নির্ধারণে ১০টি স্তর (ডিসাইল) ব্যবহার করে থাকে বিবিএস। সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, সর্বনিম্ন পাঁচ শতাংশ আয়ের মানুষের আয় গত ছয় বছরে বেড়েছে নামমাত্র। গত ছয় বছরে সবচেয়ে কম আয়ের মানুষের আয় ১ দশমিক শূন্য ১ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৪১ শতাংশ হয়েছে। এর একটু ওপরের সারি ডিসাইল-২ এর পর্যায়ের মানুষের আয় আরও কম হারে বেড়েছে। ২ দশমিক ৮৩ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৮৬ হয়েছে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি আয়ের ডিসাইল-১০ এর পর্যায়ের মানুষের আয় ৩৮ দশমিক ১৬ থেকে বেড়ে ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক