বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “ভারত আমাদের বন্ধুত্বের দেশ, গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখবে। আমরা আগেও বলেছি, সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত সরকারকে বলেছি যে, কোনোভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ আমরা সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং এটাও বিশ্বাস করি যে গণতন্ত্র দেশগুলো সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা তাদের ভূমিকা অক্ষুণ্ণ রাখবে।”
শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কি অর্জন দেখতে পাচ্ছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৫৩ কিউসেক পানি কুশিয়ারা নদীর। এছাড়া এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অর্জন দেখতে পাইনি। যেটা দেখতে পাচ্ছি যানবাহন চলার জন্য ভারতের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে, সীমান্তে হত্যা জিরোতে আনা হবে; যেদিন এ কথা বলা হয়েছে সেদিনই দিনাজপুর সীমান্তে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আর দু’জন নিখোঁজ রয়েছে। এই হচ্ছে দৃশ্যমান প্রাপ্তি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, মহিলা দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তাদের ভূমিকা রেখেছে। এখনো আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতন দমন-পীড়ন সহ্য করে, জেল জুলুম সহ্য করে তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছে। যখন ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ব বাদি সরকার বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে। মিথ্যার মধ্য দিয়ে, জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, বিশ্বকে ভুল বুঝিয়ে, বিশ্ব বিবেককে ভুল বুঝিয়ে, বিশ্ব জনমতকে ভুল বুঝিয়ে তারা তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্যই জনগণের উপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের মাতা যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এখনো অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তাকে চিকিৎসা না দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যে মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ৩০ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। যখন আমরা নিত্যপণ্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, ভোলাতে আমাদের দু’জন কর্মী মারা গিয়েছেন তাদের হত্যার প্রতিবাদে এবং নারায়ণগঞ্জে শাওন হত্যার প্রতিবাদে যখন আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি তখন সেই সরকার তাদের পুলিশ বাহিনী এবং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করে হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে আবার সেই আগের মতো অজ্ঞাতনামা মামলা করছে। এখন তারা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে অত্যাচার করছে নির্যাতন করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানুষের ভোটাধিকার ফিরে আনার জন্য আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। আমরা বিশ্বাস করি এই লড়াইয়ের মাধ্যমে ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন এভাবেই চলে, আমরা যে আন্দোলনে শুরু করেছি আপনারা জানেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। সেই আগের মতোই, যেটাকে আমরা বলেছিলাম গায়েবি মামলা, সেই গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে।’
সারাদেশে হামলা নির্যাতনের বিষয় টেনে ফখরুল বলেন, সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব তারা শুরু করেছে। সন্ত্রাস দিয়ে কখনো টিকে থাকা যায় না। কথায় কথায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বলতে শুরু করেন, আমরা সভা সমাবেশে বাধা দেব না। বিএনপি যদি সন্ত্রাসী কাজ করে তখন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না এবং সন্ত্রাস করেও না। এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো সন্ত্রাসের চিত্র আসেনি, সন্ত্রাসের চিত্র যা এসেছে তা ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা চড়াও হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জনগণের শক্তি দিয়েই এদেরকে পরাজিত করব।
রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ইতোমধ্যে শোক প্রকাশ করেছি, আমরা মনে করি তিনি কিংবদন্তি রানী ছিলেন। রয়াল প্রশাসক হিসেবে যে ছিলেন মিথাইনে। দীর্ঘ কালের ঐতিহ্য চলে গেল। আমরা দেখেছি, গণতন্ত্রের যে বিকাশ, গণতন্ত্রের যে রক্ষণাবেক্ষণ, গণতন্ত্র যে সুরক্ষা করা যায় তার শাসন আমলে দেখেছি।
এ সময় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।