জানুয়ারির এক সকালে উত্তর ভারতের রাজ্য হরিয়ানার ছোট শহর তাউরুর কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা হয়। একটি ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাড়িটির ভেতরে তিনজন মুসলিম যুবক ছিলেন- ওয়ারিস, নাফিজ আর শওকিন।
ওয়ারিস এখন আর বেঁচে নেই। নাফিজ জেলে। আর শওকিনকে এখনো ওই রাতের ভয়াবহ স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায়।
শওকিনের ভাষ্য, তার বন্ধুকে একদল হিন্দু যুবক পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের গাড়ির পেছনে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে পেরে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
শওকিন বলছিলেন, গরুটি ছিল তার বন্ধু নাফিজের। পাশের রাজ্য রাজস্থানের ভিওয়াড়ি জেলা থেকে নিজের বাড়ি হরিয়ানায় গরুটি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সাথে ছিল তার দুই বন্ধু ওয়ারিস আর শওকিন।
তারা গাড়ি দিয়ে হরিয়ানা যাওয়ার সময় গো-রক্ষকরা তাদের ওপর হামলা করে। ওই গো-রক্ষকরা মূলত হিন্দু তরুণ ও যুবকদের নিয়ে গড়া দল, যারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গরু আনা-নেয়ার বিষয়টি নজরাদারিতে রাখে। জবাই করার জন্য যেন গরু আনা নেয়া করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দেয় তারা।
ভারতের অনেক রাজ্যেই গরু জবাই নিষিদ্ধ।
পুলিশের দাবি, ওয়ারিসের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
হরিয়ানার নুহ জেলার পুলিশ সুপার বরুন সিংলা বলেন, ‘একজন ট্রাক ড্রাইভার ও কয়েকজন গো-রক্ষক আমাদের গাড়ি দুর্ঘটনার খবর জানায়। আমরা যখন ঘটনাস্থলে যাই, তিনজন গাড়ির ভেতরেই ছিল। আমরা তাদের কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে একজনের মৃত্যু হয়।’
গাড়িটি যে ভ্যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, সবজি বহনকারী ওই ভ্যানটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ সুপার সিংলা জানান, ওই ঘটনায় নাফিজ আর শওকিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তাদের গাড়িতে গরু পাওয়া গেছে বলে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার।
কিন্তু শওকিনের কাছে ঘটনার সম্পূর্ণ ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়।
জামিনে মুক্তি পাওয়া শওকিন বলেন, তাদের গাড়িকে গো-রক্ষকদের একটি গাড়ি তাড়া করছিল, যে কারণে সবজির ভ্যানের সাথে সংঘর্ষ হয় গাড়িটির।
তাউরু এলাকায় ঘটা ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে দুর্ঘটনার পরপরই শওকিনদের গাড়ির কাছে বড় একটি গাড়ি আসে। ওই গাড়িটির ছাদে একটি সাইরেন লাগানো ছিল। পরের ঘটনা দেখা যায় ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা এক ব্যক্তির করা ভিডিওতে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায় যে ধারালো অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ কিছু গো-রক্ষক গাড়িতে থাকা তিন যুবককে বের করে তাদের গাড়িতে তোলে। গাড়ির বুট থেকে গরুটিও বের করে তারা।
শওকিন বলছে, তাকে ও তার দুই বন্ধুকে ওই গো-রক্ষকরা মারধর করে এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ওয়ারিসের মৃত্যু হয়।