গ্রামের নাম সুখী নীলগঞ্জ। কিন্তু এ গ্রামবাসীকে অসুখী করে রেখেছে দুটো ভাঙা-জরাজীর্ণ সেতু। এ সেতু দুটোকে মরণফাঁদ বললেও ভুল হবে না। প্রায় ২০ বছর আগে করা সেতুগুলো সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য এখন।
বর্ষার মৌসুমে ভাঙা এই সেতু দিয়ে চলাচলে পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভয়ে অনেকে সেতুতে না উঠে নৌকায় খাল পার হন। মোটরসাইকেল পার করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। একটু বেখেয়ালি হলেই সোজা নিচে পানিতে। রোগীকেও দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে এ ভাঙা সেতুর কারণে। অনেকে সেতু পার হতে হবে দেখে সন্তানকে স্কুলেও দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি নিয়ে ছোট যানবাহনসহ প্রতিদিন সুখী নীলগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার হাজারও মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। শঙ্কা রয়েছে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার। সেতু দুটি মেরামতে ব্যর্থ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও নেই কোনো পদক্ষেপ। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া ইউনিয়নের অবস্থিত সুখী নীলগঞ্জ গ্রাম। সেখানে ভারানি খালের ওপর নির্মিত সেতুর এমন বেহাল দশা।
সেতুটি স্থানীয়দের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা জানান, এ সেতু দিয়ে গারুরিয়া ইউনিয়নের জিনিয়া, নীলগঞ্জ, খয়রাবাদ, রবিপুর, বারঘরিয়া, পার্শবর্তী দুধল ও কবাই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচল করতে হয়। মানুষের পাশাপাশি ছোট ধরনের যানবাহনসহ পণ্যবাহী যানবাহনও চলে।
সুজন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দুই দশক আগে নির্মাণ করা সেতুটি সময়ের পরিক্রমায় জরাজীর্ণ হয়ে পরেছে। খালের মাঝে থাকা পিলারগুলো অসমান্তরালভাবে দেবে ও হেলে পড়েছে। ফলে সেতুর ওপরের অংশও দেবে যাওয়ার পাশাপাশি হেলে গেছে। আর যে জায়গা দেবে গেছে, সেখানে কনক্রিট খসে পড়ে বিশাল গর্ত হয়েছে। স্থানীয়রা ভেঙে যাওয়া অংশে কখনও কাঠ আবার কখনও কলাগাছ কেটে দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা সচল রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, সেতুর মূল অবকাঠামোর পাশাপাশি রেলিংয়ের বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গেছে। অনেক জায়গার কনক্রিটের ঢালাই পড়ে গিয়ে রড বেরিয়ে আছে। সংযোগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। আর এসব কারণে সেতুটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বহু আগে থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান রিজিয়া নামের এক নারী।
তিনি বলেন, সুখী নীলগঞ্জ বাজারের সঙ্গে আশপাশের বহু গ্রামের সংযোগ যেমন সেতুটি ঘটিয়েছে, তেমনি নীলগঞ্জ বাজার ও খয়রাবাদ বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ৬-৭ বছর ধরে সেতুই করুণ দশা। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় না বললেই চলে। অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি ছোট ছোট বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে হলে সেতু পার হওয়া নিয়ে অভিভাবকদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত থাকে না।
নীলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সেতু সংস্কারের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের জানানো হলে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকির আশঙ্কা নিয়ে সেতুটি পারপার করেন। এ বাজারের ব্যবসায়ী সন্তোষ শীল বলেন, শুধু ব্যবসায়ী নয়, এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ এই ভাঙা সেতু। এক কথায় আমাদের জীবনের উন্নয়ন থমকে গেছে এই ভাঙা সেতুর কারণে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে বর্তমান সময়ে জীবন পঙ্গুত্বের সমান।
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, সেতুটি নতুন করে নির্মাণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, পরবর্তী উন্নয়ন সভায় সংস্কারযোগ্য এ সেতুর কথা উত্থাপন করা হবে।
এদিকে সুখী নীলগঞ্জ ভারানি খালের ওপর জরাজীর্ণ এই সেতু থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে থাকা অপর একটি আয়রন ব্রিজেরও একই অবস্থা। লোহার বিম ও রেলিংয়ে মরিচা পড়ে খয়ে যাচ্ছে। স্লাবগুলো ভেঙে যাওয়ায় গাছের গুড়ি দিয়ে ঠিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। সেই সেতুতেও যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।