জাতীয় প্রেসক্লাব ও নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে মিছিল-সমাবেশ করতে করতে বিরক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা। কার্যকর কর্মসূচি দিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন তারা। গত সোমবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতা হরতাল, অবরোধসহ বড় কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। এ সময় তাদের সমর্থন দিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগান ধরেন।
এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গতকাল বুধবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২ আগস্ট থেকে মহানগর, ওয়ার্ড, জেলা, উপজেলায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ১৩ আগস্ট বিদ্যুৎ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন, ১৭ আগস্ট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি এবং ১৯ আগস্ট জ্বালানি তেল বিষয়ে সেমিনার করা হবে। এদিকে দলের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার সমাবেশ করবে বিএনপি।
দলের নেতাকর্মীদের মনোভাব বুঝতে পেরে করণীয় নির্ধারণে তারেক রহমান গত রবিবার স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা আমাদের সময়কে বলেন, দলের সিনিয়র নেতারা এখনই বড় কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। এ কারণে বৈঠকের শুরুতেই ‘হরতাল দেওয়া যাবে না’ বলে স্থায়ী কমিটির একজন নেতা তার বক্তব্য শুরু করেন। তাকে সমর্থন করে আরও দুই নেতা বক্তব্য দেন। কিন্তু বৈঠকে অংশ নেওয়া চার নেতা তাদের বিরোধিতা করেন। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত সোমবার নয়াপল্টনে যুবদলের সমাবেশে। সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায় হরতাল, অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ওই দুই নেতার বিপরীত বক্তব্য দেন।
যুবদলের সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের সীমানা আটকে গেছে, প্রেসক্লাব-বিএনপি অফিস। আমাদের মিছিল, হরতাল অবরোধে যেতে হবে। একই অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর বলেন, কর্মসূচিতে আমরা যদি হার্ড লাইনে না যাই; সরকার সরকারের জায়গায় থাকবে। আমরা জনসভা করব, অগণিত মামলায় জর্জরিত হব কিন্তু সরকার পতন ঘটাতে পারব না। এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হরতাল অবরোধ করি না বা করতে পারি না, তা নয়। কিন্তু যখন-তখন করব কেন? যখন করার সিদ্ধান্ত হবে আপনারা জানতে পারবেন।
বিএনপির চারজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের গুলিতে ভোলায় দুই নেতা নিহত হওয়া এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরের তৎপরতায় দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, বিএনপি কবে কঠোর আন্দোলন করবে, নাকি এভাবে কালক্ষেপণ করে করে নির্বাচনে অংশ নেবে?