দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্য থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে বা উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (ডিএমডি) মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পদায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত পরিপত্র অনুসরণ করে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত বাছাই কমিটি কর্তৃক সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। কমিটির সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নীতিমালা-২০২৩’-এ এসব কথা বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি এ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্য সচিব হবেন- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংক প্রশাসন) বা যুগ্মসচিব (বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখা) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। কমিটির অন্যান্য সদস্য হবেন- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব।
বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে বা আন্তঃব্যাংক বদলি ও পদায়ন করা হবে; পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিবেচনা করা হবে; অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগে উল্লিখিত ছয় সদস্যের একটি অনুরূপ বাছাই কমিটি উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতা, চাকরির অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা, অতীত কর্মকাণ্ড, সততা ও সুনাম ইত্যাদি যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত পরিপত্র অনুসরণ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করবে।
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ ও পদায়ন করা হবে; পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মহাব্যবস্থাপক হিসেবে অন্যূন দুই বছর এবং ৯ম গ্রেড থেকে ন্যূনতম ২০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে। তবে কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের কোনো উচ্চতর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হলে, তাদের ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত পদ থেকে পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা গণনা থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনে প্রিন্সিপাল অফিসার পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের ১৪ বছর, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের ১১ বছর, সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের আট বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি, নিয়োগ, পদায়ন ও আন্তঃব্যাংক বদলি বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে জনস্বার্থে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্য থেকে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রেষণে পদায়ন ও আন্তঃব্যাংক বদলি করা যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা (নম্বর ১৫), ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিকাল (নম্বর ০৫), ব্যাংকিং ডিপ্লোমা (নম্বর ০৫), পেশাগত ডিগ্রি (নম্বর ০৫), পেশাগত প্রকাশনা (নম্বর ০৫), চাকরির রেকর্ড (নম্বর ০৫), বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (নম্বর ৪০) ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ (নম্বর ১৫) ইত্যাদি সব মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে বাছাই করবে কমিটি।
জানা যায়, বাছাই প্রক্রিয়ায় পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নম্বর বিভাজন নিয়ে ব্যাংকারদের কারো কারো মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ উপখাতে মোট নম্বর রাখা হয়েছে ১৫ এবং সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে স্নাতকোত্তর পর্যায় (মাস্টার্স)। কারো কারো মতে, এ উপখাতে আরো উচ্চতর শিক্ষার বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি এবং এ বিষয়ে কোনো পৃথক নম্বর রাখা হয়নি।