শুক্রবার, ০৬:২৭ অপরাহ্ন, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ব্যবসা-ব্যয় আরো বৃদ্ধির শঙ্কা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৫৫ বার পঠিত

শিল্পের গ্যাসের দাম একসাথে প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তিন দফা বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে ডলারের দাম বাড়ছে, অপর দিকে ইউটিলিটির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে এমনিতেই তারা সমস্যায় আছেন, এর ওপর ঋণের একক সুদহার তুলে দিলে ব্যবসা ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এতে টিকে থাকাই কঠিন হবে।

কথাগুলো বলছিলেন একজন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। ওই উদ্যোক্তার মতো অনেকেই ঋণের সুদহার তুলে দেয়া নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যে ঋণের একক সুদহার তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করা, ডলারের একক দর বাস্তবায়ন করাসহ প্রায় দুই ডজন শর্ত ছিল। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ছাড় পাওয়ার জন্য শর্তগুলো পরিপালনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ঋণের একক সুদহার তুলে দেয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এমন একটি সুদহার নির্ধারণ করা যাতে, আইএমএফের শর্তও পরিপালন করা হয়, আবার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারাও স্বস্তিতে থাকে। এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গত রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে গভর্নর জানান, ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক ‘রেফারেন্স’ রেট করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সুদহারের একটি করিডোরের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি রেফারেন্স রেট ঠিক করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেই রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে ঋণ ও বিনিয়োগের সুদহার ঠিক করবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে গভর্নর আরো জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এটি করতে চাহিদাজনিত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার নীতিতে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরেকটি হচ্ছে বিনিময় হার একক রেটে নিয়ে আসা। বর্তমানে আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স ও নগদ উত্তোলনে বৈদেশিক মুদ্রার একাধিক রেট আছে। শিগগির একটিতে নামিয়ে আনা হবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে হবে। তৃতীয়টি হচ্ছে ঋণ সুদহারের রেফারেন্স রেট কার্যকর করা। যা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঋণের সুদহার ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এক অঙ্ক অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেই থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।

এদিকে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে মানুষ অভাবের তাড়নায় ব্যাংক থেকে আমানত তুলে ভেঙে খাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমানতের ওপর। ইতোমধ্যে আমানত কমে গেছে। আমানত প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ছিল, তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি যেটা হবে, আমানতের সুদহার তার চেয়ে কম হবে না। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ঘরে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। এমন প্রেক্ষাপটে শুধু ভোক্তা ঋণের উপর বিদ্যমান ৯ শতাংশ ঋণ সুদহারের সাথে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বেশি সুদ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে দিলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এখনো লিখিতভাবে দেয়া হয়নি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আমানতের সুদহার বাড়ানো হলে আমানত প্রবাহ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আপত্তি হয়ে দাঁড়ায় ব্যবসা ব্যয়। আমানতের সুদহার কাক্সিক্ষত হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশই বহাল রয়েছে।

ইতোমধ্যে সরকার এক সাথে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত দুই মাসে তিন বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সাথে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর প্রতি ডলার পেতে যেখানে ৮৬ টাকা ব্যয় করতে হতো, এখন আমদানিতে ১১০ টাকা ও এর বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সাথে রয়েছে রশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আবার ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না উদ্যোক্তা। স্টীল, সিরামিকসসহ বেশ কিছু শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বলা চলে গত কয়েক মাস যাবত বন্ধই রয়েছে। সব মিলেই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-ব্যয় আকাশমুখী হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেক শিল্প কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অনেকেরই লোকসানের ধকল সামলাতে না পেরে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে ঋণের সুদহার বাড়ানো হলে ব্যবসা ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। তখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য যে কয়েকটি শর্ত ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করা, ডলারের একক হার কার্যকর করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন ঋণের একক হার তুলে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ সুদের একটি অঙ্ক নির্ধারণ করে দিবে বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী। তার সাথে ঋণের খাত অনুযায়ী সুদের একটি সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ করে দেয়া হবে; সেখানে কত শতাংশ বেশি নিতে পারবে ব্যাংকগুলো তা ঠিক করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

একজন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, ঋণের একক সুদহার তুলে না দিয়ে বিকল্প উপায় বের করা উচিত। কারণ, ইতোমধ্যে সব ধরনের ইউটিলিটি বিল বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাচ্ছে। তিনি জানান, ব্যবসায়ীরাই যদি টিকতে না পারে তবে ব্যাংকের তহবিল কিভাবে ব্যবহার হবে। আর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কীভাবে অর্জন হবে। বর্ধিত জনসংখ্যার কর্মসংস্থানই বা কীভাবে হবে। তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে সুদহারের ওপর সরকার ভর্তুকি দিতে পারে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার স্বার্থে। অন্যথায় যেভাবে চারদিক থেকে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে তাতে অনেকেই বাজারে টিকতে পারবেন না। এতে শুধু বেকারত্বই বাড়বে না, বরং গতিহীন হয়ে পড়বে দেশের অর্থনীতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com