ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে আবাসিকতার জন্য সাক্ষাৎকারে বোরকা পরে অংশ নেয়ায় শিবির ট্যাগ দিয়ে এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মাহবুবা সিদ্দিকা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং খালেদা জিয়া হলের হাউজ টিউটর।
গত ২৩ আগস্ট হলের সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকারে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভুক্তভোগী ছাত্রী এক ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে হেনস্তা না করার অনুরোধ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে আবারো ভুক্তভোগীকে ডেকে হুমকি দেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। বিষয়টি ফেসবুকে জানাজানি হলে বোরকা পরায় শিবির ট্যাগ দেয়া ও হেনস্তা করার তীব্র নিন্দা জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিভিন্ন সময় হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে ওই শিক্ষিকা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
সূত্র মতে, গত ২৩ আগস্ট খালেদা জিয়া হলের আবাসিকতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেয় হল প্রশাসন। এ সময় বোরকা পরিহিতা এক ছাত্রীকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। পরে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার আত্মীয় শাখা ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সাগরকে বিষয়টি অবহিত করলে সাগর মাহবুবা সিদ্দিকার সাথে যোগাযোগ করে ওই ছাত্রীকে হেনস্তা না করার অনুরোধ করেন। পরে ২৪ আগস্ট হল প্রভোস্টের কার্যালয়ে ভুক্তভোগীকে আবারো ডাকেন মাহবুবা সিদ্দিকা। সে প্রভোস্টের কার্যালয়ে গেলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করেন ও হুমকি দেন ওই মাহবুবা সিদ্দিকা। এ সময় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, হাউজ টিউটর নাজমুল হুদা ও মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ সময় ভুক্তভোগীর রুমমেট বোরকা পরায় তাকে শিবির হিসেবে আখ্যা দেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। এছাড়া একই কারণে ভুক্তভোগী ছাত্রীকেও নানাভাবে শিবির প্রমাণের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ সময় বোরকা পরার ব্যাপারে মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, ‘সে আগে কেমন ছিলো আর এখন কি হয়েছে একেবারেই আমুল পরিবর্তন। আমাদের তো সন্দেহ হবেই।’ একইসাথে সাগরের মাধ্যমে অনুরোধ করার বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলাম। চিনো তুমি আমারে? আমি কত পাওয়ার চালাইছিলাম তুমি জানো? তোমার এলাকার মেয়র টিটু ভাইকে চিনো? বইল্লা ঐখানে তোমারে পুইত্তা ফালামু। আমার বাড়ি কোথায় জানোস? আমার সাথে ফাইজলামি না? এলাকায়ও টিকতে পারবা না।’
ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি হিজাব পরি আর হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই না। শুধুমাত্র এই কারণে আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি শিবির করি। এছাড়া আমাকে একই কারণে হেনস্তা করেছেন ও হুমকি দিয়েছেন।’
বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনার নিন্দা জানান শিক্ষার্থীরা। রিজওয়ান উল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দূর থেকে পরিবার রেখে একটা মেয়ে পড়তে এসে একজন শিক্ষকের রোষানলে পড়লে তার কী পরিস্থিতি হয় সেটা একজন মেয়ে হয়েও ম্যাম বুঝতে পারলেন না। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রকে অবশ্যই শাসন করতে পারেন কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নয়।
হুমকির বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা সিদ্দিকা নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বোরকার বিষয়ে তাকে কিছু বলা হয়নি। তাকে পরেরবার ডাকা হয়েছে কারণ সে বাইরে গিয়ে আরেকটা ছাত্রলীগের ছেলের কাছে গিয়ে বলেছে। আর সে আমার ছাত্রের মারফতে আমাকে থ্রেট করেছে।’
তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিভাগের ছাত্র সাগরের মাধ্যমে তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও সাগর বলেন, আমি শুধু ম্যামকে ওই শিক্ষার্থীকে হেনস্তা না করার অনুরোধ করেছি। এ সময় তিনি আমাকে বলেন তুমি ওই মেয়েকে আমার সাথে দেখা করতে বলিও।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, ‘আমি যতদুর জানি ওই মেয়ে একটা ভুল করেছিলো তাই তাকে বোঝানো হয়েছে বলে জানি। আর তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে আমি জানি না।’