নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের কাশিপুরে ছাত্রদল নেতা কর্তৃক বৈষম্য বিরোধী আন্দলনের এক ছাত্রের মাছ শিকারের সিপ, হুইল, ধৃত মাছ ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯ আগষ্ট শুক্রবার দুপুর ১ টার দিকে কাশিপুরের লাকুটিয়া জমিাদার বাড়ির দিঘীতে এ ঘটনাটি ঘটে। হুইলসহ সিপ ধৃত নগদ অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুর রহমান। ছিনতাইয়ের শিকার ছাত্র কাজী মোঃ আবু যাঈদ কাশিপুর একই ইউনিয়নের বিল্ববাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় ছাত্র ( গুলিবিদ্ধ) এবং সরকারি বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।
তিনি বলেন শুক্রবার সকাল ১০টায় জমিদার বাড়ির দিঘীর লিজধারী কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লার অনুমতি নিয়ে ২ জন বন্ধু সহকারে মাছ শিকারের বরশি পেতে ছিলেন। দুপুর ১ টার দিকে কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুর রহমান তার দলবল নিয়ে এসে পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৬ টি মাছ শিকারের ছিপ হুইলসহ নগদ ১২ হাজার টাকা ও ধৃত মাছ নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ টাকা। এসময় আশিক বরশি নেওয়ার নির্দেশদাতা হিসাবে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী, কোতয়ালী স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক গাজী জাফর ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সুমন মীরের নাম বলেছেন। তবে বরশি নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন আমি শুক্রবার বরিশালের বাইরে ছিলাম। বরশি নেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তারপরও যেহেতু বিষয়টি আমার দলের ছেলেদের নাম এসেছে এবং আমার এলাকার আমি অবশ্যই এর সমাধান করার চেষ্টা করব। নির্ভরযোগ্য ও স্থানীয় সুত্র জানায়, জেলা ছাত্রদল নেতা ইমতিয়াজ হোসেন ওরফে ইমরান চৌধুরীর নেতৃত্বে বরিশাল সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাফর গাজী, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সুমন মীরসহ আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মী মিলে ৫ আগস্ট দিবাগত রাতে বাবু বাজার পদ্মদিঘিতে জাল টেনে পুরো মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত আশিকুর রহমান বলেন বরশি ও মাছ নিয়েছি এটা সত্য। ছিনিয়ে নেয়া হুইলসহ সিপ স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকের কাছে পরবর্তীতে বিএডিসি ফার্মের উপপরিচালকের কাছে রাখা হয়েছে জানায় আশিক। আশিক বলেন, আমাকে ছাত্রদলের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী তদবির করে বানিয়েছেন এবং ইমতিয়াজের বাড়ীর সাথেই আমার বাড়ি। আমি যা কিছু করেছি ইমতিয়াজ, জাফর ও সুমন ভাইয়ের নির্দেশেই করেছি। লিজধারী কামাল হোসেন লিটন মোল্লা কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি পলাতক থাকায় লিজ নেয়া এই দিঘির মাছ ৬ তারিখ রাতে ধরার কথা ছিলো। এজন্য জেলেও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা বিএনপি নেতা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনকে জানালে তিনি নিষেধ করার কারণে আর মাছ লুট করা সম্ভব হয় নাই বলে জানান আশিক।
এ বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবু তাহের খোকন মুন্সি মুঠোফোনে বলেন, ঘটনা শোনার পরে ইমতিয়াজ, জাফর, সুমন ও ছাত্রদল সভাপতি আশিককে জিজ্ঞেস করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন যে মাছ শিকারের হুইলসহ সিপ বিএডিসি ফার্মের উপপরিচালকের কাছে জমা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন পদ্মদিঘির মাছও তারা লুট করেছেন। তিনি এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
বিষয়টি ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানতে পেরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী কাজী মোঃ আবু যাঈদ (গুলিবিদ্ধ) এর পিতা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন (চান্দু কাজী) কাশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভোটে নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর কাশিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। নেতারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ঐ দিঘির কেউ নয়। ওটার লিজ ধারী মালিক চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা ও সরকারি মালিক বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। বাঁধা দিলে চেয়ারম্যান কিংবা কর্তৃপক্ষ দিবে। আবার ছিপ হুইল রেখে মাছ নিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো না।