রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পর্যন্ত সবশেষ ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাদের ৩৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন কয়েকজন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সবশেষ বহুতল ভবনটিতে লাগা আগুনে নিহত ৩৯ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। স্বজনেরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের লাশ শনাক্ত করেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকার মালিবাগ প্রথম লেনের রুবি রায় (৪০) ও তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা রায় (১৮), কাকরাইলের বাসিন্দা কুরবান আলীর মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন ওরফে রিয়া (২২), মালিবাগের ২১৬ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা প্রলেনাথ রায়ের মেয়ে পপি রায় (৩৬), পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জের শিপন পোদ্দারের মেয়ে সম্পনা পোদ্দার (১১), মতিঝিলের আরামবাগের বাসিন্দা নাজিয়া আক্তার (৩১) এবং তার ছেলে আরাহাম মোস্তফা আহামেদ (৬), পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ির বাসিন্দা মুসলেম আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৩২), মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা কবির খানের দুই মেয়ে মায়শা কবির ওরফে মাহি (২১) ও মেহেরা কবির দোলা (২৯), কাকরাইলের বাসিন্দা ও বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন ওরফে নিকিতা (২৩), রমনা সার্কিট হাউস রোডের বাসিন্দা ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক লুৎফুর নাহার করিম ওরফে লাকি (৫০) এবং তার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থী জান্নাতিন তাজরী। এছাড়া মালিবাগের বাসিন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক নাসিরুল ইসলামের মেয়ে লামিসা ইসলাম (২০), বাড্ডা মডেল টাউনের বাসিন্দা ইসমাইল গাজীর ছেলে জুয়েল গাজী (৩০), খিলগাঁওয়ের গোড়ানের বাসিন্দা দীনেশ চন্দ্র হাওলাদারের ছেলে তুষার হাওলাদার (২৩) (এলাকা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা) এবং বাসাবোর বাসিন্দা কে এম মিনহাজ উদ্দিন (২৫) (এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলা)।
নিহতদের মধ্যে আছেন- টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান (২৭), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার শান্ত হোসেন (২৪), কুমিল্লা সদরের হাতিগাড়ার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নুসরাত জাহান ওরফে শিমু (১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মৃত জহিরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আসিফ (২৫), কুমিল্লার মুরাদনগরের নবিপুরের সম্পা সাহা (৪৬), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পূর্বচর আলীমবাগের মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোর সদর থানার মধ্যপাড়ার বাসিন্দা কবির হাসানের ছেলে কামরুল হাসান (২০), ভোলা সদর থানার উত্তর পাড়ার মাঈনুল হকের ছেলে দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আতাউর রহমান ওরফে শামীম (৬৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুরের বাসিন্দা আওলাদ হোসেনের মেয়ে জারিন তাসনিম ওরফে প্রিয়তি (২০), পাবনার ফরিদপুরের সাগর (২৪), পিরোজপুর সদরের বাসিন্দা নুরুল আলমের মেয়ে তানজিলা নওরিন (৩৫), শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কালারচরের বাসিন্দা ফজর আলীর ছেলে শিপন (২১), বরিশাল শহরের কাউনিয়ার বাসিন্দা ফোরকানের মেয়ে আলিসা (১৩), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র নাহিয়ান আমিন (১৯), বরগুনার বাসিন্দা মো. নান্টুর ছেলে মো. নাঈম (১৮) এবং দ্য রিপোর্ট ডটকমের প্রতিবেদক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী (২৫)।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় মারা গেছেন এক পরিবারের পাঁচজন। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরের ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক কাউসার (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪০), তাদের তিন সন্তান সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা (১৬), সৈয়দা আমেনা আক্তার ওরফে নুর (১৩) ও সৈয়দ আবদুল্লাহ (৮)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ভবনটিতে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নীচতলায় অবস্থিত ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে সংগৃহীত একটি ভিডিওকে তদন্তের বড় আলামত হিসেবে দেখছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।