রাজধানীর মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। এ হাসপাতালে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী ও তাদের স্বজন এসে থাকেন। এসব ব্যক্তির বেশির ভাগ বিশ্বরোড থেকে মুগদা ঝিলপাড়গামী সড়ক ব্যবহার করেন। এ ছাড়া মুগদা এলাকার অধিবাসীদের একটি বড় অংশ এ সড়ক ব্যবহার করে বিশ্বরোডে আসেন। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই এ সড়কটিতে হাঁটু পানি জমে যায়। কিন্তু পানি নামার কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টি শেষ হলেও কয়েক দিন ধরে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চলে আসায় পানি জমে রাস্তায় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির পর পানি জমলে গর্তে পড়ে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া পথচারীরাও চলাচলে ভোগান্তির শিকার হন। হাঁটু পানি মাড়িয়ে তাদের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। স্বামীবাগে মিতালি বিদ্যাপীঠের সামনের সড়কেও বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এভাবে বৃষ্টি হলেই বর্তমানে অনেক এলাকায় সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। এর মধ্যে মতিঝিল, আরামবাগ, পল্টন এলাকাও রয়েছে। গতকাল সকালের বৃষ্টিতে এভাবে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিস ও স্কুলগামীরা।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, রাজধানীতে গতকালের সকালের বৃষ্টির পর দুপুরে বেশির ভাগ সড়কের পানি সরে গেছে। বৃষ্টি হওয়ার পর যেসব এলাকায় পানি জমে ছিল সেখানকার ড্রেনের মুখে থাকা ময়লা পরিষ্কার করার পর পানি দ্রুত নেমে যায়। তবে দুই-একটি জায়গা বিশেষ করে মুগদা হাসপাতালের সামনে জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সেখানকার সমস্যা নিরসনে ইতোমধ্যে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড্রেন উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে সেখানে আর জলাবদ্ধতা হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ড্রেনের মুখে পলিথিন, কাগজ, লেপ-কাঁথা থেকে শুরু করে নানারকম জিসিনপত্র গিয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়ার কারণে সাময়িক পানি জমে যাচ্ছে বলে খায়রুল বাকের জানান।
বর্তমানে মধ্য আষাঢ় চলছে। গতকাল বৃষ্টি হবে- এমন পূর্বাভাসও আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা। পূর্বাভাস সত্যি করে সকাল ৯টার পরই বৃষ্টি শুরু হয়। প্রথমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বেলা গড়াতেই তীব্রতা বাড়তে থাকে। একনাগাড়ে ঘণ্টা দুয়েকের মতো বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। এই বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃষ্টিতে রাজধানীর নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকার সদরঘাট, সূত্রাপুর, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট নতুন রাস্তা, ধানমন্ডি, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড, মোহাম্মদপুর ও বসিলার কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি পানিতে ডুবে যায়।
বৃষ্টি থামার পর সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ। রাজধানীর খিলগাঁও থেকে রিকশায় পল্টন এলাকার অফিসে আসেন বাপ্পী সরদার। তিনি বলেন, নয়াপল্টন এলাকায় বৃষ্টিতে প্রায় হাঁটু সমান পানি হয়েছে। ফকিরাপুল আসার পর রিকশা আর সামনে যেতে রাজি না হওয়ায় জুতা হাতে নিয়ে প্যান্ট হাঁটুর ওপরে তুলে হেঁটে অফিসে যেতে হয়েছে।
যশোর থেকে সকালে ঢাকায় মতিঝিলে নামার পরই হাঁটু সমান পানির মুখে পড়েন তহিদ মনি। এরপর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পানিতে গাড়ির চাকা ডুবে যাওয়ার কয়েকটি ছবি তুলে দিয়ে লেখেন, সমুদ্র পথের যাত্রায় মতিঝিল বন্দরের কাছাকাছি।
এ দিকে বংশাল সড়কে আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছিল, সেটা এখনো শেষ হয়নি। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েন। এর মধ্যে যানজট আরো যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়।
এ দিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ডুবে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা আবর্জনা সব ভেসে ওঠে গলিতে। এ ছাড়া এর মধ্যেই কোনোমতে নাক চেপে চলাচল করতে হয়েছে সেখানকার অধিবাসীদের। এ দিকে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি এড়াতে অনেকেই হাঁটা বাদ দিয়ে রিকশায় গন্তব্যে যান। আর এ সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেন রিকশাচালকরা। তবে রিকশাচালকের দাবি, দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় রিকশা চালাতে বেশি কষ্ট হয়। তাই বলে কয়ে ১০-২০ টাকা বাড়তি নেয়া হয়।
ঈদের ছুটির পর গতকালই প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়। এ কারণে সকালের বৃষ্টিতে প্রথম দিনই দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।