বুধবার, ০১:২৫ অপরাহ্ন, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বৃষ্টির প্রত্যাশায় সালাতুল ইসতিসকা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ মে, ২০২৪
  • ৫৮ বার পঠিত

সারা দেশের তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বৃষ্টির জন্য চারিদিকে তীব্র হাহাকার। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর দরবারে নামাজ পড়ে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করা সুন্নাত। বৃষ্টির যিনি মালিক তার কাছেই ধরনা দিতে, তার কাছেই বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বলে ইসলাম। ইসলামী পরিভাষায় এই দোয়ার নাম ইসতিসকা বা সিক্তকরণের দোয়া এবং নামাজের নাম ‘সালাতুল ইসতিসকা’ বা ‘বৃষ্টি কামনায় নামাজ’।

ইসতিসকার নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। নবী সা: নিজেই ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সা: নামাজের মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন, এরপর আল্লাহর কাছে পানি তলব করলেন। তিনি কিবলামুখী হলেন। তার চাদর উল্টিয়ে পরলেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।’ (বর্ণনায় বুখারি ও মুসলিম)

ইসতিসকার নামাজের পদ্ধতি : ঈদের নামাজের মতোই আজান ও ইকামত ব্যতীত দুই রাকাত নামাজ জামাতের সাথে ময়দানে আদায় করা। ঈদের জামাতের মতোই জোরে কিরাত পাঠ করবে। শুধু এতটুকু পার্থক্য যে, ইসতিসকার নামাজে অতিরিক্ত কোনো তাকবির নেই।

দুই রাকাত নামাজ শেষ করার পর ঈদের মতোই জমিনে দাঁড়িয়ে দুটি খুতবা দেবেন ইমাম সাহেব। খুতবা দেয়ার সময় ইমাম সাহেব নিজের গায়ের চাদর, জামা ইত্যাদি উল্টে ফেলা সুন্নাত। পাল্টানোর পদ্ধতি হলো : উপরের অংশ নিচে বা ডানের অংশ বামে, বামের অংশ ডানে, কিংবা জামার ভেতরের অংশ উপরে এবং উপরের অংশ ভেতরে নিয়ে যাওয়া। মোটকথা হলো, জামা উল্টে নেয়া সুন্নাত।

খুতবা শেষে কিবলামুখী হয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দোয়া করবেন। উপস্থিত সবাই দোয়ায় আমিন বলবেন।
দোয়ার সময় আম দোয়ার সময় যেভাবে হাত উঠানো হয়, ইসতিসকার দোয়ার সময় এর উল্টো করা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সেটি হলো : হাতের তালু থাকবে জমিনের দিকে এবং পিঠ থাকবে আসমানের দিকে।
ইসতিসকার নামাজের সময় : সূর্যোদয়ের পর ২০ মিনিটের মতো সময় অতিবাহিত হলে ইসতিসকার নামাজ পড়তে হয়, ইশরাক নামাজ ও ঈদের নামাজের সময়ের মতো।

নামাজে ইসতিসকার কয়েকটি মুস্তাহাব :
* যখন ইসতিসকার প্রয়োজন হবে, তখন ইমাম সাহেব তিনদিন রোজা রাখার এবং তওবা ইস্তিগফার করার হুকুম দেবেন। তারপর চতুর্থ দিন নামাজে ইসতিসকা পড়বেন।
* ইসতিসকার নামাজ পড়তে মুসল্লিরা হেঁটে আসবে।

* এদিন নতুন কাপড়ের বদলে পুরনো বা ময়লা কিন্তু পবিত্র কাপড় পরিধান করে আসবে।
* আল্লাহর দিকে তাওয়াজ্জুদ এবং খুশুখুজু ও বিনয় প্রকাশ করবে। অনুতপ্ত হয়ে মাথাকে ঝুঁঁকিয়ে রাখবে। অহেতুক কথাবার্তা এবং হাসি-ঠাট্টা থেকে বিরত থাকবে।
* প্রতিদিন নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে কিছু দান সাদকা করবে।

* সবাই খাঁটি দিলে তাওবা করবে এবং কারো উপর অন্যের কোনো হক থাকলে তা আদায় করে দেবে।
* সব মুসলমানদের জন্য ক্ষমা ও মাগফিরাতের দোয়া করবে।

* নিজেদের মধ্যে দুর্বল এবং বৃদ্ধ ও শিশুদের সবার আগে রাখবে। তাদের দ্বারাও দোয়া করাবে।
* ছোট শিশুদের মা থেকে আলাদা করে রাখবে। যেন একটি আল্লাহভীতির পরিবেশ তৈরি হয়।
* চতুষ্পদ জন্তুও নিজের সাথে ময়দানে নিয়ে আসা। যাতে করে আল্লাহ তায়ালার রহমত দ্রুত নেমে আসে।
* একদিন ইসতিসকার দ্বারা বৃষ্টি না হলে, লাগাতার তিন দিন ইসতিসকার নামাজ আদায় করা।

ইসতিসকার দোয়া : ইসতিসকার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে নিয়ম এবং তরতিবে কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও আল্লাহ তায়ালার কাছে নিচের দোয়াটি পাঠ করা খুবই কল্যাণকর ও বরকতময়। কারণ এ দোয়াটি স্বয়ং শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: বৃষ্টির জন্য পাঠ করতেন। আয়েশা রা: বলেন, লোকজন রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করলে রাসূলুল্লাহ সা: ঈদগাহে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে নিচের দোয়া করেন। এরপর আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ছোটাছুটি দেখে নবীজি হেসে ফেলেন। (আবু দাউদ-১১৭৩)

দোয়াটি হলো : ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর-রাহমানির রাহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফয়ালু মা ইউরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল গানিয়্যু ওয়া নাহলুল ফুকারাউ। আনজিল আলাইনাল গাইছা ওয়াজয়াল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।’

এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁর দয়া ও রহমত লাভের জন্য প্রার্থনা করা হয়। দোয়াটিতে নিজেকে অতি অসহায়-গরিব বলে উল্লেখ রয়েছে এবং আল্লাহকে জ্ঞান করা হয়েছে সম্পদশালী ও মহান শক্তিধর হিসেবে।
ইসতিসকা শব্দের অর্থ পানির জন্য প্রার্থনা করা। খরা বা তাপদাহের অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আকুতি ভরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয়। এই নামাজকে ইসতিসকার নামাজ বলে। পরপর তিন দিন ইসতিসকার নামাজ পড়া সুন্নাত। যদি ইতোমধ্যে বৃষ্টি হয়েও যায়, তবু তিন দিন করা উত্তম। এই তিন দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব।

লেখক :

  • ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

কলাম লেখক ও গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com