সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিবারের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দুই মামলার বাদী জালাল উদ্দিন আহাম্মদ। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী ও মেয়ে, দুই ভাতিজি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গতকাল দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। সিদ্দিক পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিংসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারসহ ঘুষ-বাণিজ্য এবং নানা দুর্নীতির অভিযোগও অনুসন্ধান করবে দুদক। এ ছাড়া চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁর তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে চট্টগ্রামের নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ ঋণের ক্ষেত্রে অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
শামীম ওসমান পরিবারের মামলায় শামীম ওসমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ও কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান সালমা ওসমান এবং প্রতিষ্ঠানের এমডি তানভীর আহমেদকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার বা ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নানক পরিবারের মামলায় তার স্ত্রী ও রাতুল টেলিকমের চেয়ারম্যান সৈয়দা আরজুমান বানু, তার মেয়ে ও ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এস আমরীন রাখিকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২(ক) (২) ধারা লঙ্ঘন করে ২৫৯ কোটি
৬২ লাখ ৫ হাজার ১৫৮ টাকা বা ৩ কোটি ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮১ মার্কিন ডলার পাচার করে কিংবা দেশের স্বার্থে আনয়নযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে অপরাধ হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তারিক সিদ্দিক, টিউলিপ ও পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতির অনুসন্ধান
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, মেয়ে বুশরা সিদ্দিক, ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সিদ্দিক পরিবারের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি জমি আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিংসহ দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
মো. আক্তার হোসেন বলেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক বানাতে তিনি (শেখ হাসিনা) ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন। এ অভিযোগের প্রাথমিক তথ্য যাচাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারসহ ঘুষ-বাণিজ্য এবং নানা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগও বিস্তারিত অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
চটপটির দোকান ও রেস্তোরাঁর নামে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ
চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, এমন তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩টি শাখা থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে চট্টগ্রামের নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। মালিক নাজমি নওরোজ হলেও প্রকৃত অর্থে ঋণের টাকা যায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের পকেটে। এমন অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে নওরোজ এন্টারপ্রাইজের একটি চটপটির দোকান ও দুটি রেস্তোরাঁর বিপরীতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৩৪ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে নাজমি নওরোজ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।