বৃহস্পতিবার, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ঠা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিপজ্জনক মাত্রার অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচবেন কিভাবে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৫ বার পঠিত

বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্বিসহ গরমে নাজেহাল অবস্থা দেশের অধিকাংশ এলাকার মানুষের। গরমের পাশাপাশি আরেক দুশ্চিন্তার বিষয় এখন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের অতিবেগুনি রশ্মি। প্রতি বছরই এই মৌসুমে অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।

অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা বেশি হলে মানুষের ত্বকের ক্যান্সার থেকে শুরু করে চোখের বিভিন্ন রকম সমস্যা, অকালে চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি হতে পারে।

গুগল ওয়েদার বা অ্যাপল ওয়েদারের মতো আবহাওয়ার বার্তা দেয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় আগামী কয়েকদিন অতিবেগুনি রশ্মির সর্বোচ্চ মাত্রা থাকবে ৭, যা অতিবেগুনি রশ্মির সূচক অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার হিসেবে বিবেচিত।

তবে আজ বুধবার থেকে পরের এক সপ্তাহে প্রতিদিন সর্বোচ্চ মাত্রা ১২ পর্যন্ত উঠতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, যা সূচক অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ের মাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই অতিবেগুনি রশ্মি সূচকটি কী? এই সূচকে নির্দেশিত মাত্রার তাৎপর্য কী?

অতিবেগুনি রশ্মি সূচক
সূর্য থেকে নিঃসৃত অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা আন্তর্জাতিকভাবে পরিমাপের মানদণ্ডটিই অতিবেগুনি রশ্মির সূচক বা ‘আল্ট্রাভায়োলেট ইনডেক্স’ হিসেবে পরিচিত।

এই সূচক শূন্য থেকে শুরু হয় এবং এর মাত্রা ১০ এর ওপর উঠতে পারে।

এই সূচকে মাত্রা যত বৃদ্ধি পায়, ত্বক ও চোখে ক্ষতির সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকে এবং তত কম সময়ে ক্ষতিসাধন করার সক্ষমতা তৈরি হয়।

অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা দিনের একেক সময়ে একেক মাত্রার হয়ে থাকে।

এই মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয় মধ্য দুপুরের দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে। সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে এই মাত্রা সর্বোচ্চ হয়ে থাকে।

ভৌগলিক অবস্থান ভেদে ও ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাভেদে একেক অঞ্চলে অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতা একেকরকম হয়ে থাকে। আবার অঞ্চলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ভেদেও মাত্রার ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- বিষুব রেখার আশেপাশে অবস্থিত অঞ্চলে অতিবেগুনি রশ্মির মাত্রা সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।

আবার কোনো অঞ্চলে বরফের উপস্থিতি, সেখানকার দূষণের মাত্রা বা ওই অঞ্চলের ওজোন স্তরের অবস্থার ওপর সেই অঞ্চলের অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতার তারতম্য হয়।

এছাড়া কোনো অঞ্চলে গাছপালা ও জলাশয়ের পরিমাণের ওপরও অতিবেগুনি রশ্মির তীব্রতার পার্থক্য হয়ে থাকে।

অতিবেগুনি রশ্মি কেন ক্ষতিকর?
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমাদের রোদ ও সূর্যালোক প্রয়োজন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু অতিরিক্ত রোদের কারণে শরীরে অতিবেগুনি রশ্মির নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

অতিবেগুনি রশ্মির ফলে সবচেয়ে মারাত্মক যে রোগ হতে পারে তা হলো ত্বকের ক্যান্সার।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ত্বকের যেসব জায়গা বেশিক্ষণ রোদে উন্মুক্ত থাকে– যেমন মুখমণ্ডল, ঘাড়, গলা, হাত– সেসব জায়গার ত্বকে ক্যান্সার সেল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এর পাশাপাশি অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ত্বক পুড়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, জ্বলুনি হওয়া থেকে শুরু করে জ্বর, মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ইউভি রশ্মি চোখের জন্যও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মাত্রায় ইউভি’র কারণে ক্যাটারাক্ট হতে পারে, যার ফলে চোখে ঝাপসা বা অস্পষ্ট দেখার মতো উপসর্গ তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন অ্যাজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ইউভি রশ্মির কারণে ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন বা চোখে স্পট তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে অন্ধত্বেও রূপ নিতে পারে।

এছাড়া ইউভি রশ্মির আধিক্যের কারণে সময়ের আগে মানুষের চামড়া কুঁচকে যায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।

ইউভি’র ক্ষতি থেকে বাঁচতে করণীয়
অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে বেশকিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

– দুপুরের রোদে বাইরে বের না হওয়া ও ত্বকে রোদ না লাগানো

– আঁটোসাটো কাপড় পরা। কারণ কাপড়ের সেলাইয়ের মধ্যে থাকা ছিদ্র ভেদ করে ইউভি রশ্মি ত্বকে – আঘাত করতে পারে। তাই ঘাড় ঢাকা ও লম্বা হাতাওয়ালা জামা পরার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

– চওড়া হ্যাট বা টুপি পরা, যেন টুপি মুখমণ্ডল, ঘাড় ও চোখে রোদ লাগতে না দেয়। টুপি বা হ্যাটের বদলে ছাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে।

– শতভাগ ইউভি সুরক্ষা দেয়, এমন সানগ্লাস পরা।

– ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন ও ঠোঁটের জন্য লিপ বাম ব্যবহার করা।

ইউভি’র উপকারী দিক
ইউভি বা অতিবেগুনি রশ্মি যে শুধু মানুষের জন্য ক্ষতিকর, সেরকমও নয়।

ইউভি রশ্মির ইতিবাচক দিক নিয়ে অসলো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষক আস্তা জুযেনিয়েন ও জোহান মোন ২০১৩ সালে ‘বেনেফিসিয়াল এফেক্টস অব ইউভি রেডিয়েশন আদার দ্যন ভিটামিন ডি প্রোডাকশন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে।

তাদের ওই গবেষণাপত্রে উঠে আসে যে ভিটামিন ডি উৎপাদনের পাশাপাশি শরীরের জন্য আরো বেশ কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখে অতিবেগুনি রশ্মি।

সূর্যের আলো মানবদেহের সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে যে ভিটামিন ডি সৃষ্টি হয়, তা বিশেষ ধরনের ইউভি রশ্মি ইউভি বি’র দ্বারা তৈরি হয়।

এছাড়া ইউভি রশ্মির কারণে ত্বকের রোগ যেমন হয়, তেমনি ইউভি বি রশ্মি সোরিয়াসিস, ভিটিলিগো, অ্যাটোপিক ডারমাটাইটিস সহ বেশ কিছু রোগ থেকে ত্বককে রক্ষাও করে।

ইউভি রশ্মি দেহে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে, যা রক্তচাপ কমায় ও হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

আর ইউভি রশ্মি শরীরে এন্ডরফিন নিঃসৃত করতে সহায়তা করে, যার ফলে মানসিক চাপ কমে ও মেজাজ ভালো থাকে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com