রবিবার, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পূর্ণ বিবরণ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮ বার পঠিত

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ভাষণ শুরু করেন তিনি। যা বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড একযোগে সরাসরি সম্প্রচার করছে।

নিচে ভাষণের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা হলো :

বিসমিল্লাহির রহমানের রহিম
প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে আমার সালাম জানাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।

আজ জাতির এক বিশেষ দিন। বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবার দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অনেক অস্ত্রকে অগ্রাহ্য করে খালি হাতে রুখে দাঁড়িয়ে সম্মুখ সমরে লড়াই করে নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উৎসবের দিন। এই দিনে স্মরণ করি লক্ষ লক্ষ শহীদদেরকে, অগণিত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ জনতার আত্মত্যাগকে; যার ফলে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

কিন্তু আমরা সেই অর্জনকে আমাদের দোষে সম্পূর্ণতা দিতে পারিনি। সর্বশেষ এবং প্রচন্ডতম আঘাত হানলো এক স্বৈরাচারী সরকার। সে প্রতিজ্ঞা করেই বসেছিল এদেশের মঙ্গল হতে পারে এমন কিছুই সে অবশিষ্ট থাকতে দেবে না।

এ বছরের বিজয় দিবস বিশেষ কারণে মহা আনন্দের দিন। মাত্র চার মাস আগে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে গেল, দেশের সবাই মিলে একজোটে হুংকার দিয়ে উঠলো, পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করেছে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান।

যে হাজার হাজার শহীদ এবং আহতদের আত্মত্যাগ এবং ছাত্র-জনতার অটুট ঐক্যের মাধ্যমে এই গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হলো তাদের সবাইকে স্মরণ করি এবং আজ এবারের মহা বিজয়ের দিনে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।

নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, একটি বৈষম্যহীন দেশ গড়ার তাগিদে ছাত্র জনতা স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রক্ত দিয়ে চার মাস আগে নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল, সে ঐক্য এখনো পাথরের মতো মজবুত আছে। মাত্র কয়েক দিন আগে জাতি আবার গর্জে উঠে সমগ্র পৃথিবীকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।

যখন পরাজিত শক্তি নড়েচড়ে ওঠার চেষ্টা করছিল, সকল রাজনৈতিক দলের এবং সকল ধর্মের শীর্ষ ব্যক্তিদের এবং ছাত্রদের সমাবেশের মাধ্যমে এক কন্ঠে সজোরে ঘোষণা দিয়েছিল আমরা যে নিরেট ঐক্যের মাধ্যমে অভ্যুত্থান করেছি সেই ঐক্য আরও জোরদার হয়েছে। চার মাসের ব্যবধানে আমাদের ঐক্য কোথাও শিথিল হয়নি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে আমরা অটুট আছি।

বহির্বিশ্বে চাতুর্যপূর্ণ প্রচারণা দিয়ে যারা আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তারা দূরত্ব সৃষ্টি তো করতে পারেইনি, বরং সারা জাতিকে সগৌরবে উচ্চকণ্ঠে তার ঐক্যকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে উজ্জীবিত করেছে।
পরাজিত শক্তি তাদের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা প্রতিদিন দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার জন্য বিপুল অর্থব্যয়ে নানা ভঙ্গিতে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের আয়ত্তে রয়েছে। তাদের সুবিধাভোগীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। আমাদের ঐক্য অটুট থাকলে তারা আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য অর্জন থেকে ব্যর্থ করতে পারবে না। সজাগ থাকুন। নিজের লক্ষ্যকে জাতির লক্ষ্যের সঙ্গে একীভূত করুন। পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।

আমি দেশের গণমাধ্যমকর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই, বিশ্বের কাছে দেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরুন। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যই হোক আমাদের হাতিয়ার।

জাতির এই নিরেট ঐক্য এই বছরের বিজয় দিবসকে স্মরণীয় করে রাখবে। ইতিহাসের অনন্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে রাখবে। এই ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাইকে আমার অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই ঐক্যের জোরে আমরা আমাদের সকল সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে পারবো।

এই বিজয় মাসে আমাদের গণঅভ্যুত্থানকে অভিনন্দন জানাবার জন্য, আমাদের বিজয় দিবসে যোগ দেয়ার জন্য ঢাকায় এসেছেন পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা। তিনি তাঁর দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ২০০২ সালে পূর্ব তিমুর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের জাতীয় উৎসবে শরিক হওয়ার জন্য জাতির পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

কয়েক দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্রদূতগণ একসঙ্গে ঢাকায় এসে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
এই দেশগুলোর বেশিরভাগ দূতাবাস দিল্লিতে। তারা অনেকেই আগে কোনোদিন ঢাকায় আসেনওনি। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। একত্রে ঢাকায় আসলেন শুধু এই বার্তা দেবার জন্য যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা দেবার জন্য প্রস্তুত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রক্রিয়ার কথা আমি তাঁদেরকে জানিয়েছি। সেটিতে তাঁরা পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়েও আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের জানিয়েছি। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে যাদের ভিসা অফিস নয়াদিল্লিতে আছে, তাদেরকে ঢাকা বা অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশে ভিসা অফিস নিয়ে আসার জন্য আমি অনুরোধ করেছি। আমি বলেছি, ইউরোপীয় দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা পেতে সমস্যা হয়। তারা যদি ভিসা সেন্টার ঢাকায় নিয়ে আসেন তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভোগান্তি কমে যাবে। এছাড়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার মাত্রা বাড়ানোর বিষয়ে আমি আলাপ করেছি।

বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য সকল দাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সক্ষম হয়েছে। তারা নতুন উদ্যোগে এবং নতুন উৎসাহে আমাদের সঙ্গে নতুন আর্থিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এগিয়ে এসছে। অর্থনীতির সাফল্যের ব্যাপারে দেশে এবং বিদেশে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্থনীতি তখন ভেঙে পড়ার অবস্থায়। গত চার মাসে এই অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা এবং নিয়ম শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হয়নি। ব্যাংক যতই দুর্বলই হোক তাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রথমদিকে আমানতকারীর টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এখন সেটা তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংককে আমানতকারীর আমানত ফেরত দেবার জন্য নতুন টাকার সরবরাহ দিতে প্রস্তুত হয়েছে। আশা করি এতে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সকলের আস্থা ফিরে আসবে।

প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সরকারের শুরুতেই একটি কমিটি নিয়োগ করেছিলাম। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এই কমিটির কাজ ছিল অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতি কোন পরিস্থিতিতে যাত্রা শুরু করলো তার একটা দলিল রচনা করা। এতে কী পেলাম, কী পেলাম না, তার একটা চিত্র তুলে ধরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই কমিটিকে। ড. দেবপ্রিয়ের সভাপতিত্বে গঠিত ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নির্ধারিত সময়ে এই কঠিন কাজ সম্পন্ন করে আমাদের কাছে ৪০০ পৃষ্ঠার একটা বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে।

রিপোর্ট পড়ে দেশের মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছে। দেশে বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গভীর আগ্রহ নিয়ে এই রিপোর্টটি সংগ্রহ করছে। দেশের মধ্যে পত্র-পত্রিকা, সেমিনার, আলোচনা সভা, টেলিভিশনে এই নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে গেছে এটা সবাই বুঝতে পারছিল। কিন্তু অর্থনীতিকে কী পরিমাণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়ে গেছে তার পরিমাপ সম্বন্ধে কোনো ধারণা করতে পারছিল না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি হিসেব- নিকেশ করে এর পরিমাণ বের করে দিয়েছে।

এই রিপোর্ট পড়ে সকলে অবিশ্বাস্য চোখে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। কারো মুখে কথা বের হচ্ছে না। দিন-দুপুরে সকলের সামনে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে পাচার করে নিয়ে গেছে। কেউ বলার ছিল না। কেউ দেখার ছিল না। যারা নিয়ে গেছে তাদেরকে কেউ বাধা দেয়নি। বরং সর্বস্তরে সবাই আগ্রহ সহকারে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। কারণ তারা সব আপন লোক। বিশাল বিশাল প্রকল্প নেয়া হয়েছে ঋণের টাকায়। এসব প্রকল্পের মোড়কে বিশাল বিশাল অর্থ লুটপাট করেছে। প্রকৃত ব্যয়ের চাইতে কত বেশি ব্যয় ধরে কাদের হাতে টাকাটা পাচার করে দেওয়া হয়েছে তাও এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে যে বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক টাকাই লুটপাট হয়েছে। দেশে এমন ধরনের পোষ্যতোষী পুঁজিবাদ তৈরি করা হয়েছিল যার সুবিধাভোগী ছিল স্বৈরাচার ও তার সহযোগীরা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে যে পরিমাণ কর ছাড় দেয়া হয়েছে, সেটা অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে দেশের শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ, স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা সম্ভব ছিল।
পাচার করা এই টাকা আপনাদেরই টাকা। তারা প্রকাশ্যে আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করে বিদেশে ভোগ বিলাসে ব্যয় করেছে।

সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকাতেও পাচার করা টাকায় গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড় নিয়ে একটা সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পাচার করা এই সীমাহীন অর্থ এখন আবার দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করে তারা এদেশে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টির কাজে ব্যয় করছে। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন এটাকা কীভাবে দেশের সংহতির বিরুদ্ধে সকল প্রকার অপপ্রচারের কাজে লাগানো হচ্ছে।

প্রতিবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে হার দেখানো হয়েছে সেটাও মনগড়া। দেশকে এবং পৃথিবীকে বলা হচ্ছিল কী সুন্দর দেশ বাংলাদেশ- লাফিয়ে লাফিয়ে তার উন্নয়ন এগিয়ে চলছে।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় কাজ হলো পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা। তারা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে সেটা চেষ্টা করছে। কাজটা কঠিন, কারণ এ বিষয়ক আইন কঠিন। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে সাহস ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। বারবার বলছি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আংশিক টাকা হলেও যেন ফেরত আনা যায়।

প্রিয় দেশবাসী,
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্নখাতে সংস্কারের লক্ষ্যে গুম কমিশনসহ ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশন পূর্ণ উদ্যমে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। গুম কমিশন গত পরশু তাদের প্রতিবেদনের প্রথম খণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করে গেছেন। গুমের শিকার বহু পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে এটা এখন প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এই প্রতিবেদন পড়ার আগেই আপনাদেরকে সাবধান করে রাখি, এটা একটা লোমহর্ষক প্রতিবেদন। মানুষ মানুষের প্রতি কী পরিমাণ নৃশংস হতে পারে এতে আছে তার বিবরণ। অবিশ্বাস্য বর্ণনা। সরকারের আক্রোশের শিকার হয়ে ঘটনাচক্রে যারা এখনো বেঁচে আছেন তারা আজ পর্যন্ত মুখ খুলতে সাহস করছেন না। তাদের ভয় কিছুতেই কাটছে না। তাদের ভয়, হঠাৎ যদি ঐ জালেমরা আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের প্রতি এরা নৃশংসতম হবে। গত সরকারের ঘৃণ্যতম অধ্যায়ের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে এই প্রতিবেদন অমর হয়ে থাকবে।
আমি আশা করছি, কমিশনগুলো এখন থেকে নিয়মিতভাবে তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা পেশ করতে থাকবে।

প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ।

এ প্রসঙ্গে বড় খবর হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।

প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরো কঠিন হলো এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হবার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে। আমার একান্ত ইচ্ছা এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ তরুণী ভোটারেরা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি।

এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের এর কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার সাহস করতে পারবে না।

নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল তারা ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভুয়া ভোটারদেরকে তালিকা থেকে বের করে দিতে হবে।
এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।

সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরো উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।

আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরো ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

প্রিয় দেশবাসী,
যেকোনো সংস্কারের কাজে হাত দিতে গেলে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের প্রয়োজন। এই ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া কী হবে?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এভাবে অগ্রসর হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এরা শীঘ্রই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করবে বলে আমি আশা করি। আমরা এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এর কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সকল পক্ষের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে সেগুলি চিহ্নিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা।
যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তা বিবেচনা করে আমি এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করব। আমার সাথে এই কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ। কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। প্রথম এই ছয়টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাবার পর আগামী মাসেই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন কাজ শুরু করতে পারবে বলে আমি আশা করছি।

এই নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে সমস্ত সিদ্ধান্ত জরুরি, সে সমস্ত বিষয়ে তাড়াতাড়ি ঐকমত্য সৃষ্টি করা এবং সকলের সঙ্গে আলোচনা করে কোন সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায় সেই ব্যাপারে পরামর্শ চূড়ান্ত করা।

প্রিয় দেশবাসী,
নির্বাচন আয়োজন ও সংস্কার ছাড়াও আপনারা আমাদের ওপর অনেকগুলো দায়িত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছ থেকে আমরা বিপর্যস্ত এক অর্থনীতি পেয়েছি। আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ১৫.৬৩ শতাংশ বেশি। সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে রফতানি ১৬.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে রফতানি আয় ছিল ১৪.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বছরের হিসেবে এই প্রান্তিকে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১২.৩৪ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসবের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনেরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আমরা এখনো পাইনি। তবে আমার বিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে আসবে। গত কয়েক মাসে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সরবরাহ বাড়িয়ে, আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়ে, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে এবং বাজার তদারকির মধ্য দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এটা সম্ভব হলে আমরা আশা করি জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আপনাদের কষ্টে সমব্যথী। তবে আমরা জানি সরকারের কাজ কেবল সমবেদনা জানানো নয়। আমরা আপনাদের কষ্ট কমিয়ে আনতে সকল রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আমরা ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেছে বাজারে পণ্য সরবরাহের কোনো সংকট হবে না। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে যদি কেউ কৃত্রিম কোনো সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে আমরা তাকে কঠোর হাতে দমন করবো। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিকল্প কৃষি বাজার চালু করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী,
হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত পতিত স্বৈরশাসক ও তার দোসরদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আসামিদের বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ তারা পাবেন। বিচার প্রক্রিয়া সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিচারের যেকোন অংশ চাইলে যে কেউ রেকর্ড করার সুযোগ পাবেন। আইসিসি প্রসিকিউটর করিম খান সম্প্রতি আমার সাথে দেখা করেছেন। তিনি আইসিটি প্রসিকিউটর এবং অন্যান্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং আইসিটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আলাদাভাবে আমরা গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করবো বলে তাকে জানিয়েছি।

প্রিয় দেশবাসী,
জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে তার অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতি অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী- সকল পেশার, সকল বয়সের নারীরা এ আন্দোলনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এ বছর বেগম রোকেয়া দিবসে দেশজুড়ে আন্দোলনে নারীদের আত্মত্যাগ ও ভূমিকার বিষয়ে বড় আকারে আলোচনা হয়েছে। ঐদিন জুলাই কন্যারাও ঘোষণা দিয়েছে তারা তাদের কথা কাউকে ভুলে যেতে দেবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারী অধিকার রক্ষায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছে। শিগগিরই তারা তাদের রিপোর্ট দেবে। জুলাই কন্যারা ঘোষণা দিয়েছে, প্রতি বছরের ১০ ডিসেম্বর তারিখে নির্ধারিত সময়ে সারা দেশে সকল পরিবারের নারী, শিশু, কিশোরী, তরুণী, মহিলা, বৃদ্ধা, একসঙ্গে নিজ নিজ নির্ধারিত স্থানে- সেটা উঠান হোক, বাড়ির সামনে রাস্তায় হোক- সমাবেশ করে দেশের অর্ধেকাংশ মানুষের অস্তিত্বের কথা সারা জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে দেবে।

যে তরুণীরা জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকল, তারা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থেকে আর কোনো দিন সরে যাবে না। তারা শুধু নতুন বাংলাদেশ নয় নতুন এক পৃথিবী গড়ে তোলার মহা কর্মযজ্ঞে বাংলাদেশের সকল বয়সের নারীদের সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দেবে।

সবশেষে, এই বিজয়ের মাসে আমি বাংলাদেশের দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। শক্তিশালী স্বৈরাচারী সরকারকে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা হটাতে পেরেছি। তারা এখনো সর্বশক্তি দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে নস্যাৎ করতে চাচ্ছে, একের প্রতি অন্যের বিষ উগড়ে দিতে চাচ্ছে। তাদের এই হীন প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই সফল হতে দেবেন না।

প্রিয় দেশবাসী,
এটা আমাদের বিজয়ের মাস। ১৬ই ডিসেম্বরে যুদ্ধ জয় করে পৃথিবীর বুকে বাঙালি জাতির একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাস। শত্রুকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার মাস। নিজের শক্তিকে আবিষ্কার করার মাস। এই বিজয়ের মাসে আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রা শুরু করলাম। এই যাত্রা শুভ হোক। গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত ও আনন্দদায়ক হোক।

বিজয়ের মাস হোক নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে জাতির মহা ঐক্যের মাস।
বিজয়ের মাস হোক ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ দৃঢ়তার সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করার মাস।
বিজয়ের মাস হোক নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণদের প্রচণ্ড দুঃসাহস প্রকাশের মাস।

বিজয়ের মাস হোক নাগরিকদের পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্ক স্থায়ীভাবে ভয়বিহীন থাকবে এমন এক সমাজ গড়ার মাস— সংখ্যালঘুদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভয়ে ভীত হতে হবে না, নারীকে পুরুষের ভয়ে ভীত হতে হবে না, বিত্তহীনকে বিত্তবানদের ভয়ে ভীত হতে হবে না, নিজের মতপ্রকাশে কারো ভয়ে ভীত হতে হবে না।
বিজয়ের মাস হোক অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রতিজ্ঞা নেবার মাস।

প্রিয় দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, নারী আসুন আমরা প্রাণ ভরে বিজয়ের মাস উদ্যাপন করি।
সকলকে বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই বিজয়ের মাস জাতির জন্য এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করুক।

আপনাদের সবাইকে আবার আমার সালাম জানাচ্ছি।
আসসালামু আলাইকুম
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
আল্লাহ হাফেজ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com