সোমবার, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

বিএনপির মহাসমাবেশ আজ আসছে নতুন কর্মসূচি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২১ বার পঠিত

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপির মহাসমাবেশ আজ। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই মহাসমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। সমাবেশে যোগ দিতে গত কয়েক দিন ধরে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। গতকাল দুপুরের পর থেকেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্লোগানমুখর বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে। একই সাথে ছিল পুলিশের কড়া পাহারাও। বিএনপি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ এ মহাসমাবেশে জনতার স্্েরাত নামবে। মহাসমাবেশ থেকে সরকার হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে আগামী ৩০ অথবা ৩১ অক্টোবর সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা কিংবা ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চূড়ান্ত কর্মসূচি সফলের অংশ হিসেবে আজকের মহাসমাবেশে মূলত ধারণার অতীত লোকের সমাগম ঘটাতে চায়। মহাসমাবেশ থেকে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচিতে জড়ানোর পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে আক্রান্ত হলে পিছু না হটে পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলে দলের মধ্যম সারির নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী অন্যান্য দলগুলোও রাজধানীর ১০টি স্পটে আজ একই কর্মসূচি পালন করবে। অনুমতি দেয়া না হলেও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের ‘এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে আজকের এই মহাসমাবেশটি আহ্বান করা হয় গত ১৮ অক্টোবর। সেই সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। এরপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।
ঢাকায় মহাসমাবেশের ওই কর্মসূচি দেয়ার পর থেকেই তা সফলের প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক সকল স্তরে মহাসমাবেশ সফলের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও মহাসমাবেশ সফলে ‘সর্বশক্তি’ প্রয়োগের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়িয়ে সকল সাংগঠনিক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। সাধারণ মানুষও সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক চিঠির উত্তরে বিএনপি জানিয়েছে, সমাবেশে ১ লাখ থেকে সোয়া লাখ লোক হবে।
বিএনপির মহাসমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, মহাসমাবেশ আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মহাসমাবেশ ঘিরে ত্রাস সৃষ্টির জন্য, নেতাকর্মীদের ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব করেও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, এটা শুধু বিএনপির সমাবেশ নয়, এটার সাথে সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের ওপর কারো আস্থা নেই। সুতরাং সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন, মহাসমাবেশ সফলে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। গ্রেফতারসহ কোনো বাধাই জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না।
জানা গেছে, মহাসমাবেশে যোগ দিতে তিন দিন আগে থেকেই সারা দেশের নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী হয়েছেন। গ্রেফতার এড়িয়ে নানা কৌশলে তারা ঢাকা পৌঁছাচ্ছেন, গতকাল শুক্রবারের মধ্যেই অধিকাংশ ঢাকায় চলে এসেছে।

কী কর্মসূচি আসছে : মহাসমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তা চূড়ান্ত করতে কয়েক দিন ধরে স্থায়ী কমিটিসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপির হাইকমান্ড। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যুক্ত দল ও জোটগুলোর সাথেও বিএনপির বৈঠক হয়েছে। সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে আজ শনিবার সকালনাগাদ কর্মসূচি চূড়ান্ত করে শরিকদের জানিয়ে দেয়া হবে। সব দল ও জোট নিজ নিজ সমাবেশ থেকেই নতুন সেই কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

বিএনপির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহাসমাবেশ থেকে আগামী ৩০ অথবা ৩১ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। তবে কৌশলগত কারণে সরাসরি ‘ঘেরাও’ শব্দটি ব্যবহার না করে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। যেটা নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হবে। তবে পথে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কয়েক ঘণ্টার অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন তারা। আরো জানা গেছে, এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে সচিবালয় ঘেরাও ছাড়াও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন অভিমুখী ঘেরাও বা পদযাত্রার কর্মসূচি আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিক্রিয়া, আচরণ কী হয়- সেটার ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে দাবি আদায়ে টানা অবরোধের কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে বিএনপি।

এ দিকে মহাসমাবেশের পর নেতাকর্মীদের ঢাকা না ছাড়তে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগেই এক দফার আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
ঢাকায় দশটি স্থানে মহাসমাবেশ : সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে শনিবার ঢাকায় দশটি স্থানে মহাসমাবেশ করবে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো। বেলা ২টা থেকে এসব মহাসমাবেশ শুরু হবে

বিএনপি বেলা ২টায় নয়াপল্টন সড়কে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায়, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বেলা ২টায়, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে বেলা ২টায়, গণতন্ত্র বাম ঐক্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১২টায়, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি মতিঝিলের নটর ডেম কলেজের কাছে গণফোরাম চত্বরে বেলা ১২টায়, এলডিপি : পূর্ব পান্থপথে এফডিসির কাছে এলডিপি কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৩টায়

লেবার পার্টি : পুরানা পল্টন মোড়ে বিকেল ৪টায়, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) বিজয়নগর পানির ট্যাংকের কাছে বেলা ১১টায়, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) পুরানা পল্টন কালভার্ট রোডে বিকেল ৩টায় এবং এনডিএম মালিবাগ মোড়ে বেলা ১১টায় মহাসমাবেশ করবে।
নয়া পল্টনে ভিড় : মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। সন্ধ্যার দিকে এই ভিড় আরো বেড়ে যায়। এসব নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। তারা সেখানে মুর্হুমুহু স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে হ্যান্ডমাইকে চলাচলের জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্যও বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করতে শোনা যায়।

সরকার পদত্যাগের এক দফার দাবিতে বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে গত ১২ জুলাই। এরপর টানা তিন মাসে তারা ঢাকাসহ সারা দেশে রোডমার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি করে। এরপর গত ২৮ জুলাই তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com