ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
উপনির্বাচনে বর্তমানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তারসহ পাঁচ প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মঈন উদ্দিন মঈন ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞাকে উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনতেই তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে সূত্রে প্রকাশ।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শুক্রবার এই তিনজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী থাকতে পারবেন না বলে তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। এই তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য শেষ দিন রোববার পর্যন্ত সময় চাইলে তাতেও সায় দেননি জেলার নেতারা। শনিবারের মধ্যেই তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
এদিকে, এই তিন নেতার মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আল মামুন সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এই উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: জিল্লুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ১৫ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এখন পর্যন্ত এই আসনের উপনির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তারসহ পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থীদের হলফনামায় ত্রুটি ও ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক তালিকায় গরমিল থাকায় পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
উপনির্বাচনের অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ এবং জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করা মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, মঈন উদ্দিন মঈন ও শাহজাহান আলম সাজু বলেন, সোয়া ১১টার দিকে আমরা তিনজন প্রার্থী একসাথে প্রত্যাহার করেছি।
তারা প্রায় অভিন্ন ভাষায় জানান, ভাঙা নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নেবেন। তাই ব্যক্তিগত কারণে প্রত্যাহার করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার বলেন, ‘আসনটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উন্মুক্ত রেখেছে। আমাদের দলের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজ নিজ দায়িত্বে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রত্যাহারের সময় আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম।’
এদিকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উকিল আব্দুস সাত্তারকে জিতিয়ে আনার বিষয়ে দলে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারি লোকজনও যুক্ত রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে এ পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতি একেবারে কমে যেতে পারে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদকে বসাতে চাপ দিতে চাইছে না সরকার। তবে তাদের স্বাভাবিক প্রচারের সুযোগ দেয়া হবে না বলে মনে করছে স্থানীয় সূত্রগুলো।
এ দুজনের বাইরে এই আসনে আরো দুই প্রার্থী হলেন জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হামিদ ভাসানি ও জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। এলাকায় তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বিজয়ী হয়েছিলেন। ১১ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।