শনিবার, ০৫:২২ অপরাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

বার্মা থেকে মিয়ানমার : যেভাবে সঙ্কটের শুরু, এখন যা ঘটছে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৫৬ বার পঠিত

মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাতের ইস্যুটি বাংলাদেশেও তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর বহু সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারে এই মুহূর্তে ঠিক কী চলছে, দেশটির সরকার ব্যবস্থাটা কেমন, সেখান থেকে যারা পালিয়ে আসছে তাদের সাথে কী করা হবে- এমন আরো নানা তথ্য থাকছে এই প্রতিবেদনে।

শুরুতেই জানা প্রয়োজন মিয়ানমারের সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে, যাতে রয়েছে নানা উত্থান-পতন।

এই প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে কিছু সময় ‘বার্মা’ বলে উল্লেখ করা হবে। কারণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির নাম এক সময় বার্মা ছিল এবং রাজধানী ছিল রেঙ্গুন।

পরে ১৯৮৯ সালে দেশটির সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে ‘মিয়ানমার’ রাখে এবং রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম রাখা হয় ‘ইয়াঙ্গুন’।

২০০৫ সালে ইয়াঙ্গুন দেশের রাজধানীর মর্যাদা হারায়। বর্তমানে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো এবং ইয়াঙ্গুন তাদের দেশের প্রধান শহর।

ব্রিটিশ শাসন, জাপানি শাসন
হাজার বছর ধরে মিয়ানমারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শাসন করেছে। তবে দেশটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল ১৮২৪ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত টানা ১২৪ বছর।

শুরুতে বার্মাকে ভারতের একটি প্রদেশ ধরা হতো। পরে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশরা বার্মা প্রদেশটিকে পৃথক রাষ্ট্র ঘোষণা করে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে বেরিয়ে আসার পর বার্মা প্রথমবারের মতো স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তবে মাঝে তিন বছর ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বার্মা জাপানিদের দখলে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মায় জাপানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি।

মূলত বার্মা ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির সহায়তায় জাপানিরা দেশটি দখল করেছিল। ১৯৪২ সালে জাপানিদের তত্ত্বাবধানে ও প্রশিক্ষণে তৈরি হয়েছিল বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি।

তৎকালীন বার্মার জেনারেল, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সুচির বাবা অং সান এই বার্মা ইনডিপেনডেন্ট আর্মি তৈরি করেছিলেন।

এই আর্মি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল বার্মা থেকে ব্রিটিশ ও জাপানি শাসন উৎখাত করা।

বার্মা পরে স্বাধীন হয়েছে ঠিকই তবে সেটা অং সানের মৃত্যুর পর।

মিয়ানমারের আজকের যে সেনাবাহিনী, সেটার গোড়াপত্তন হয়েছে এই বার্মা ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মি থেকেই।

অর্থাৎ মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ারও আগেই তাদের সেনাবাহিনী গঠন হয়েছিল।

যে বার্মা ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মি জাপানকে বার্মার দখল নিতে সহায়তা করেছিল পরে তারাই অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট পিপলস ফ্রিডম লিগে (এএফপিএফএল) রূপান্তরিত হয় এবং মিয়ানমারে জাপানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১৯৪৫ সালে অং সানের নেতৃত্বাধীন এএফপিএফএলের সহায়তায় জাপানি দখলদারিত্ব থেকে মিয়ানমারকে মুক্ত করে ব্রিটেন এবং নিজেদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

এর তিন বছরের মাথায় ব্রিটিশ শাসনেরও অবসান হয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী বার্মায় সেনা শাসন
অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গের লেখা বই ‘দ্য মিলিটারি ইন বার্মা/মিয়ানমার’ অনুযায়ী, মিয়ানমার মাত্র ১২ বছর বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে ছিল। বাকি সময় সামরিক সরকার শাসন করেছে।

ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর বার্মায় চারটি বহুদলীয় নির্বাচন হয়েছে।

১৯৫৮ সালে এএফপিএফএল-এ ভাঙন দেখা দিলে তাদের হঠিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়।

এরপর ১৯৬০ সালের নির্বাচনে এএফপিএফএল-এর একটি অংশ জয়ী হলেও তাদের রাজনৈতিক নীতিমালা সেনাবাহিনীকে ক্ষুব্ধ করে।

এরপর ১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বার্মার ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক জান্তা। এরপর ৫০ বছরের বেশি সময় দেশটি সেনা শাসনের অধীনে থেকেছে।

এ সময় কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও সামরিক সরকারকে টলাতে পারেনি।

১৯৮৯ সালে দেশটিতে সামরিক আইন জারি হয়। ওই সময় বার্মার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমার রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারপন্থী কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। অং সান সু চিকে গৃহবন্দী করা হয়।

১৯৯০ সালে বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্রের পতনের পর মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। ওই নির্বাচনে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’ বা এনএলডি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয় লাভ করে। তবে সেনাবাহিনী সে ফল নির্বাচনি আইনের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়।

এরপর সু চিকে কয়েক দফায় গৃহবন্দী করে সামরিক সরকার। সু চি’র কর্মী সমর্থকদের ওপরও হামলা চলতে থাকে।

এরপর মিয়ানমার সামরিক শাসনের অধীনে ছিল।

সু চির জয়, পুনরায় সেনা শাসন
২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বিরোধী এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয় পায়। তবে দলটি নিজেদের মতো দেশ পরিচালনা করতে পারেনি।

তার কারণ সেনা সরকার প্রণীত ২০০৮ সালের সংবিধান।

এই সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সংসদের অন্তত ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ থাকবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের ধারা ও আইন পরিবর্তনের উপায় নেই।

এরপরও ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এনএলডি পুনরায় জয়ী হয়। ভরাডুবি হয় সেনা-সমর্থিত দলের।

এরপর দেশটির সামরিক বাহিনী নির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগ এনে পরের বছর ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়।

অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সারাদেশে দমন অভিযান চালায়। হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়।

গত তিন বছরে দেশটির ২৬ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হতে বাধ্য হয়। মিয়ানমারের অর্থনীতিতে ধস নামে। জ্বালানির দাম এই সময়ের মধ্যে প্রায় চার গুণ বেড়েছে। পণ্যের দামও বেড়েছে লাগামহীনভাবে।

সব মিলিয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

এই বিদ্রোহীরা কারা?
মিয়ানমারের জান্তা সরকার সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর ধারণা করা হচ্ছে, এই মুহূর্তে তারা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে।

এতটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে দেখা যায়নি।

প্রথম আড়াই বছর সামরিক বাহিনী দমন-পীড়নের মাধ্যমে যতটা সহজে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিল পরে পরিস্থিতি উল্টে যায়।

২০২১ সালের এপ্রিলেই ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী সদস্যরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এনইউজি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে যোগ দেয়।

সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে মিলে তারা প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে এবং সব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তৈরি করে ‘পিপল ডিফেন্স ফোর্স’।

সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ নতুন মাত্রা পায় উত্তরাঞ্চলের তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী এক হয়ে আক্রমণ শুরুর পর।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর একজোট হয়ে সুসংগঠিতভাবে হামলা চালায় দেশটির উত্তরের শান রাজ্যের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী, যাদের এক সাথে ডাকা হচ্ছে ‘থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স’ নামে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে।

তারা একে নাম দেয় ‘অপারেশন ১০২৭’।

এছাড়াও শত শত সাধারণ মানুষও এই জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে তারা প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে।

সামরিক বাহিনীকে এই মুহূর্তে সারাদেশ জুড়েই হামলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এই সঙ্কট গভীর হওয়ার একটা বড় কারণ হলো সামরিক বাহিনী কিংবা বিদ্রোহী বাহিনীর কেউই শান্তি আলোচনার জন্য বসতে রাজি হয়নি।

কী হচ্ছে মিয়ানমারে, কেন পালাচ্ছে সীমান্তরক্ষীরা?
স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সামরিক বাহিনীর সঙ্ঘাত চলমান থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে সেই সঙ্কট সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা।

অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার সৈন্য তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দখলে থাকা অনেক শহর ও এলাকা বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের একটি দল ‘স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার নামে পরিচিত, তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জান্তা সরকারের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ ভূখণ্ডের ওপর, ২৩ শতাংশ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশের মতো।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতিতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রদেশে ৩৩টি শহরের দখল হারিয়েছে। এর মধ্যে চিন, সাকাই, কিয়াং প্রদেশ এবং উত্তরাঞ্চলের শান এবং শিন রাজ্য উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মিরা দখলে নিয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।

জানুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন ও আরাকান রাজ্যেও যুদ্ধ-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

দু’পক্ষের সঙ্ঘাত এতটাই তীব্র আকার নেয় যে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে।

এর আগে, শত শত সৈন্য সীমান্ত দিয়ে চীন ও ভারতে পালিয়েছে। যুদ্ধ না করেই হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তা সরকার ৩০ হাজারের মতো সেনা হারিয়েছে। যেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে সেনার সংখ্যা মাত্র দেড় লাখ।

সামরিক বাহিনী প্রতিদিনই পরাজয়ের মুখে পড়ছে এবং তারা দখল হয়ে যাওয়া ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এমন অবস্থায় সামরিক বাহিনী দ্রুত জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে।

এই অবস্থায় মিয়ানমার সরকারের পক্ষে নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজটি বেশ কঠিন।

পালিয়ে আসাদের ফেরত পাঠানো হবে?
মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের পুরোটাই উন্মুক্ত।

ফলে ওই সীমান্ত দিয়ে প্রায়ই মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া যায়।

একটি দেশের নাগরিক বিনা অনুমতিতে অন্য আরেকটি দেশের সীমানায় ঢুকে পড়লে সেটিকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবেই ধরা হয়।

এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচতে একটি দেশের নাগরিক অন্য দেশের সরকারের কাছে সাময়িকভাবে আশ্রয় চাইলে, সেটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়।

মানবিক দিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তাকে আশ্রয় দেয়া হয়। তবে নিরাপদ উপায়ে কিভাবে তাকে আবার দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়, সেটিও বিবেচনা করা হয়।

এক্ষেত্রে আশ্রয়দাতা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আশ্রয় গ্রহীতার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জানানো হয়।

এরপর দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ফেরত পাঠানো হয়।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েক শ’ সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে মানবিক দিক বিবেচনা করে।

শিগগিরই তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।

কিন্তু তাদেরকে ফেরত পাঠাতে ঠিক কত দিন লাগতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে সরকার ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তবে সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছু দিন সময় লেগে যেতে পারে।

তবে ঠিক কত দিনের মধ্যে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে, সেটি এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তাদেরকে নৌপথে মংডু দিয়ে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

কেননা রাখাইন রাজ্যের অনেক স্থানে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্ঘাত অব্যাহত থাকলেও মংডু শহর এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভারত তাদের মিয়ানমারের সাথে সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর কথা ঘোষণা করলেও বাংলাদেশ আপাতত এমন পদক্ষেপে যাচ্ছে না বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

তবে সীমান্তে নিরাপত্তা আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com