বাতজ্বর বললে অনেকে শুধু বাত বা অস্থিসন্ধির সমস্যা বলে মনে করেন। কিন্তু বাতজ্বরের কারণে আমাদের হৃদয়ও আক্রান্ত হতে পারে। তবে বাতজ্বরে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পরও বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বল্পসংখ্যক রোগীর হৃদযন্ত্রের ভাল্বের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থাকেই বলা হয় বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ।
যারা বারবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাদের বাতজ্বরজনিত ভাল্বের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও কাশি হতে পারে। পানি জমার কারণে পায়ের পাতা ফুলে যেতে পারে। রোগী অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমনকি অকালমৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রেপটোকক্কাস জীবাণু দিয়ে টনসিল আক্রান্ত হলে রক্তে এএসওর মাত্রা বেড়ে যায়। বাতজ্বর হলে অবশ্যই জোনস ক্রাইটেরিয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে। এ দেশের বেশির ভাগ ল্যাবরেটরির রিপোর্টে এএসওর স্বাভাবিক মাত্রা অনূর্ধ্ব ২০০ লেখা থাকে। এটি এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা।
বাতজ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
বাতজ্বরে আক্রমণের সংখ্যা যত বাড়বে, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি হবে। আর যাদের ভাল্ব ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ভাল্ব আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যারা বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে ভুগছেন- তাদের তিন সপ্তাহ পরপর একটি বেনজাথিন পেনিসিলিন ইনজেকশন নিতে হবে অথবা দিনে দুবার পেনিসিলিন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এ ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি। মোট পাঁচ বছর অথবা ২২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নিতে হবে। এর মধ্যে যেটি দীর্ঘতর হবে, সেটিই প্রযোজ্য হবে। যেমন- যার বয়স ২০, তাকে নিতে হবে পাঁচ বছর; যার বয়স ১০, তাকে নিতে হবে ১২ বছর; যাদের হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে, তাদের কমপক্ষে ১০ বছর অথবা ৩০ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নিতে হবে (এর মধ্যে যেটি দীর্ঘতর হয়)। যাদের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হয়েছে এবং যারা ভাল্বের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, তাদের আজীবন নিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
শিশু হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।