ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হওয়ার পরই বাজেটের আকার দ্বিগুণ হয়ে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্প আসবে দেখিয়ে বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ আয়-ব্যয় দেখাতেন মেয়র তাপস। কিন্তু বছর শেষে সে আয়-ব্যয় আর দেখা যেত না। বিদেশী কোনো অর্থায়নই আসতো না ডিএসসিসিতে। ফলে বছর শেষে দেখা যেত বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল তিন ভাগের এক ভাগ। মূলত বাজেট এভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাতেন তাপস, যা ছিল মূলত শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণের চোখ ফাঁকি দিতেই তিনি এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন।
জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন সর্বশেষ বাজেট পেশ করেন ২০১৯-২০ অর্থবছরে। ওই বছর তিনি মোট বাজেট পেশ করেন তিন হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার। এর মধ্যে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে আয়ের টার্গেট করেন দুই হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ওই বছর বাজেট বাস্তবায়ন হয় দুই হাজার ৫৮৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার। এর মধ্যে মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট (ডিসিএনইউপি) আনতে সক্ষম হন। ওই বছর সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে মোট আয় হয় এক হাজার ৮৭১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়র হওয়ার পর প্রথম ২০২০-২১ সালের বাজেট পেশ করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এতে তিনি হঠাৎ করেই বাজেটের আকার দ্বিগুণ করে ফেলেন। বাজেট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা থেকে এক লাফে ছয় হাজার ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা হয়ে যায়। এতে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে আয়ের টার্গেটও দ্বিগুণ তথা চার হাজার ৯১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দেখানো হয়। ওই অর্থবছরে মেয়র তাপস বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেন মাত্র এক হাজার ৭৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার, যা তার আগের বছরের চেয়েও প্রায় ১০০ কোটি টাকা কম। এ ছাড়া সরকারি মাধ্যম থেকে ৬৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা পেলেও বৈদেশিক সহায়তামূলক কোনো প্রকল্পই পাননি তিনি। এর পরও পরের বছর ২০২১-২২ সালে তিনি আবারো বাজেটের টার্গেট বাড়িয়ে ছয় হাজার ৭৩১ কোটি ৫২ লাখ টাকা করেন। আগের বছর বিদেশী সহায়তামূলক প্রকল্প আনতে ব্যর্থ হলেও আবারো ওই খাতে আয়ের টার্গেট ধরেন চার হাজার ৮২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কিন্তু ওইবারও বিদেশী সহায়তামূলক প্রকল্প আনতে ব্যর্থ হন মেয়র তাপস। সরকারি খাত থেকে মাত্র ৫২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা পান তিনি।
এর পরও পরের বছর ২০২২-২৩ সালে তিনি আবারো বাজেটের টার্গেট বাড়িয়ে ছয় হাজার ৭৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা করেন। আগের বছরগুলোতে বিদেশী সহায়তামূলক প্রকল্প আনতে ব্যর্থ হলেও আবারো ওই খাতে আয়ের টার্গেট নেন চার হাজার ৮১৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ওইবারও বিদেশী সহায়তামূলক প্রকল্প আনতে ব্যর্থ হন মেয়র তাপস। সরকারি খাত থেকে মাত্র ৩১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা পান তিনি। একইভাবে তার পরের অর্থ বছরেও ছয় হাজার ৭৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে চার হাজার ৪৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে আয়ের টার্গেট করেন। কিন্তু আবারো ব্যর্থ হন মেয়র। শুধু সরকারি সহায়তা হিসাবে পান ৭১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ বছরেও আরো ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ছয় হাজার ৭৬০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন তাপস। সেখানে আয়ের জন্য চার হাজার ৩৬৩ কোটি টাকায় ধরা হয় সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে। কিন্তু তার সময়ে বিদেশী কোনো প্রকল্পই আসেনি বলে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাপস শুধু বাজেটের আকার বেশি দেখাতেই প্রকল্পের নামে বেশি টাকা দেখাতেন। তিনি সাঈদ খোকনের চেয়ে দ্বিগুণ আকারের বাজেট পেশ করলেও বাস্তবায়ন হতো মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। বছরের পর বছর তিনি এভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজাটের আকার বাড়িয়ে জনগণের চোখে ধুলা দিতেন। প্রতি বছর তিনি এ কাজ করে গেলেও তাকে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে সবক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে শোঅফ করত সেভাবে তাপসও বাজেটের আকার বেশি দেখিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করে গেছেন।