মেঘনা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ‘সাগর নন্দিনী-২’ নিমজ্জিত হওয়ার পর নৌ সেক্টরে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের একাধিকস্থানে পানি কমে যাওয়া এবং ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় যেকোনো সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলমান শীত মৌসুমে ঘণ কুয়াশায় একাধিক চ্যানেলে অসংখ্য মালবাহী জাহাজ আটকে থাকছে। এসব জাহাজের সাথে যাত্রীবাহী জাহাজের সংঘর্ষও হয়েছে। লঞ্চের মাস্টাররা অভিযোগ করেন, ড্রেজিং বিভাগ খননের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথ অনেকাংশে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের হিজলা-বাবুগঞ্জ চ্যানেলে একটি মালবাহী জাহাজের সাথে ধাক্কা লাগে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১৬। এতে দুটি নৌযানেরই সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, হিজলা-বাবুগঞ্জ চ্যানেলটির দেড় কিলোমিটার পথে দীর্ঘদিন ধরে পানি কমে গেছে। শেষ ভাটায় এখানে দুই মিটারের বেশি পানি থাকে না। যে কারণে প্রায় প্রতিদিনই এ স্থানে ৮-১০টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকে থাকে।
মজিবর রহমান আরও বলেন, শুস্ক মৌসুমে পরিস্থিতি এমনই জটিল যে সাগর নন্দিনী জাহাজ ডোবার মতো আরো বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর বরিশালের ড্রেজিং বিভাগ সভা করে খননের প্রতিশ্রুতি দিলেও অদ্যবর্ধি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যে কারণে প্রতিদিন লঞ্চ থামিয়ে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে নৌপথ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমভি পারাবাত-১২ লঞ্চের মাস্টার শামীম আহমেদ বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌপথের চাঁদপুর অংশের মেঘনার হিজলা-বাবুগঞ্জ চ্যানেলের দেড় কিলোমিটার, শেওড়া এলাকার এক কিলোমিটার এবং বরিশাল অংশের নলবুনিয়া-বামনির চরের এক কিলোমিটার এলাকায় এখন লঞ্চ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মোঃ হাসেম মাস্টার বলেন, ড্রেজিং বিভাগ প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে খনন করলেও তা কাজে আসছে না। ঢাকা-বরিশাল নৌপথ সংরক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে সরু হয়ে আসছে। ড্রেজিং বিভাগ পরিকল্পিতভাবে খনন করলে এমনটা হতো না। তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে এ নৌপথের বিভিন্নসস্থানে পানি কমে যাওয়ায় লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যদিও চলতি মাসে এক সভায় ড্রেজিং বিভাগ এ নৌপথটি দ্রুত খননের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তা আলোর মুখ দেখেনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের চাঁদপুরের উপ-পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে আমি কয়েকবার ড্রেজিং বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। তারা এ চ্যানেলটি খনন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, লঞ্চ মাস্টাররা এ বিষয়ে অনেকটা বাড়িয়ে বলছেন। তারা বরিশাল বন্দরে খনন শুরু করেছেন। আরও ড্রেজার (খননযন্ত্র) আসছে। ঢাকা-বরিশাল নৌপথে এখনো খনন শুরু হয়নি। ড্রেজিং বিভাগের সার্ভে অনুযায়ী চলতি মৌসুমেই গুরুত্বপুর্ন স্থানগুলো খনন করা হবে।