বৃহস্পতিবার, ১০:১৩ অপরাহ্ন, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে দিনভর খোঁজাখুঁজি, ভোরে জমিতে পাওয়া গেল লাশ গৌরনদীতে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই-খাতা, কলম ও গরিব-অসহায়, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ৭ জন ঢামেকে শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠক চলছে ‘আ.লীগকে পুনর্বাসন করতে হলে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে করতে হবে’ ভারত তার দেশের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে : পাকিস্তান টিউলিপ সিদ্দিককে ‘দুনীতিগ্রস্ত’ বললেন ইলন মাস্ক প্রধান উপদেষ্টার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যাচ্ছে বিএনপি আজকেই টাকা না দিলে দুর্বার রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল

বরিশালে স্কুলছাত্র তুহিনের বানানো রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ ভাসছে পানিতে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৯ বার পঠিত

অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা মো. তুহিন ইসলাম পড়ালেখার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করছে। আর সুযোগ পেলে চেষ্টা করেন প্রযুক্তি নির্ভর কিছু না কিছু বানাতে।

সম্প্রতি তার নিজ হাতে বানানো ককসিটের লঞ্চ পানিতে ভাসতে ‍শুরু করেছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে তুহিনের নিজ এলাকা বরিশাল নগরের পলাশপুরের বৌ-বাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে সদ্য সংযুক্ত হওয়া এমভি সুন্দরবন-১৬ এর আদলে তুহিনের বানানো লঞ্চটি চালাতে রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবহার করা হয়েছে।

সেসঙ্গে লঞ্চটিতে থাকা দুটি মোটর চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। আর ওই মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা দুটি পাখাকে (প্রপেলার) ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে।

চারতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রংয়ের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে, তিন তলার ছাদের সঙ্গে লাগানো হয়েছে ব্লু টুথ স্পিকার।

বাস্তবে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের মতো নিচ তলায় ডেক, সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন, চারতলার পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা ও দোতলার সামনে হেড লাইটও রয়েছে।

সুন্দরবন-১৬ এর আদলে তৈরি এ লঞ্চের কারিগর বরিশাল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েল্ডিং বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন জানান, তার বাবা মনির হোসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মা নাছিমা বেগম গৃহিনী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে মেঝ।

তার বড় ভাই তুষার তেমন কিছু না করেন না। অভাব-অনটনে তাকে পড়ালেখার পাশাপাশি চাচা মিন্টু হাওলাদারের দোকানে রোজ দুইশত টাকা বেতনে কাজ করতে হয়।

তিনি জানান, আমি প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, সেজন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু পেলে তা দিয়ে কিছু বানানোর চেষ্টা করি।

মাঝেমধ্যে ইলেকট্রিক কাজ করে কিছু রোজগারও করি। আবার স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখার পাশাপাশি নগরের ফলপট্টি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিন্টু চাচার দোকানে কাজ করে প্রতিদিন কিছু টাকাও উপার্জন করি। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা সংসারে দিলেও কিছু নিজের কাছে রাখি।

সেখান থেকে টাকা জমিয়ে ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, কন্ট্রোলার, প্রপেলার সংগ্রহ করি। টাকা জমিয়ে দুই মাসের চেষ্টায় সুন্দরবন-১৬ এর আদলে লঞ্চটি বানাই। ছয় ফুট লম্বা ও দেড় ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দুরত্ব পর্যন্ত হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তিনি বলেন, মূলত সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি যখন বানানো শুরু হয়, তখন বেলতলার ডক ইয়ার্ডে প্রায়ই যেতাম। সেখান থেকেই ককসিট দিয়ে লঞ্চ বানানোর ইচ্ছে জাগে।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর আমার এ লঞ্চটি বানাই এবং দুইমাস পর পানিতে ভাসাই। সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ যেদিন উদ্বোধন হয়, সেদিন আমার হাতে বানানো লঞ্চটি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম।

সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু কাকা ও কোম্পানির লোকজনকে বলেছিলাম এটি তাদের উপহার দিতে চাই। মনে হয় আমাকে কিছু দিতে হবে এটা ভেবে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখানে থেকে অনেক কষ্ট পেয়েই বাসায় আসি।

এর কয়েকদিন পর আমার বাবা রাগ করে এটি ঘর থেকে ফেলেও দেন। এতে আমার লঞ্চটির বেশকিছু ক্ষতিও হয়। তবে সেগুলো মেরামতে তেমন আগ্রহ ছিল না কিন্তু মিন্টু চাচার কারণে ও স্থানীয়দের উৎসাহে লঞ্চটি আবারও মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি।

মিন্টু বলেন, আমি সারা বছর ফল বিক্রি করলেও শীতে ভ্যানে করেই পিঠা বিক্রি করছি ফলপট্টি এলাকায়। তুহিন সকালে স্কুলে যায় আর বিকেলে আমার দোকানে বসে, যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলে।

ওর বাবা কিছুই করে না, মাঝে মধ্যে ‍তুহিনের বড় ভাই অটোরিকশা চালায়। শুধু তুহিনেরই পড়ালেখা আর উপার্জনের ইচ্ছে আছে। তবে ও যে এর বাইরে কিছু করতে পারবে তা ভাবিনি।

তিনি বলেন, পলাশপুরে বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর পানি ওঠে। তুহিন লঞ্চ তৈরির আগে একটি পানির পাম্পও বানিয়েছে তা দিয়ে ঘরে জমে থাকা পানি বের করেছি।

এবার একটা লঞ্চ বানিয়েছে, যখন লঞ্চটি আশপাশের পুকুরগুলোতে ভাসায় তখন মানুষের ভিড় হয়। সুযোগ পেলে তুহিন বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা আমার বিশ্বাস।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com