বরিশাল বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন ৮০ বছরের পুরনো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনকে গতিশীল করতে ১৯৪২ সালে ৩০ শতাংশ জমির ওপর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকে খেলাধুলায় ক্লাবটি বিশেষ অবদান রেখে আসছিল। কিন্তু গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ওই ক্লাব থেকে কেউ কোনও ধরনের খেলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছর ধরেই ওই ক্লাবে মদ ও জুয়ার আসর বসে আসতো নিয়মিতভাবে।
অবশেষে সেই ক্লাবটি গুড়িয়ে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে পূর্ব-নোটিশ ছাড়াই ভবনটি সিটি কর্পোরেশন গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এক কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের টিনশেড আধাপাকা একতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে ট্রাকে করে ভাঙাচোরা জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি নগরীর হোটেল ব্যবসায়ী শফিকুল আলম গুলজার বলেন, ‘৮০ বছরের পুরনো ক্লাবটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল সিটি করপোরেশনের। কিন্তু কোনও ধরনের নোটিশ ছাড়াই রাতের আঁধারে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি আমরা। তাছাড়া ক্লাবে বহু বছরের পুরনো জরুরি অনেক দলিলপত্র ছিল। ভেঙে ফেলায় সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির বলেন,‘বিভিন্ন কারণে ২০১৪ সালের পর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। তবে এর আগে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, বিডি হাবিবুল্লাহ, লকিতুল্লাহ, সাবেক পৌরসভার চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা, বর্তমান বিসিবির পরিচালক আলমগীর হোসেন আলোর মতো সম্মানিত ব্যক্তিরা।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,’ক্লাবটিতে সামনের গেল বন্ধ করে দীর্ঘ বছর যাবত এক শ্রেণির অসাধু লোক জুয়া ও মদের আসর বসাতো। সেখানে বরিশালের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও অংশ নিতো। সবশেষে নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড নিবাসী সাবেক যুবলীগ নেতা শাহিন শিকদার ও যুবদল নেতা মোমেন সিকদারের ভাই মনু সিকদার ক্লাবটির এই জুয়া ও মদের আসর নিয়ন্ত্রণ করতে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মনু শিকদার একাধিকবার মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান,’ক্লাবের ভিতরে বসে দিন-রাত মাদক ও জুয়া চলতো, কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারতো না, যে করতো তাকেই রোষানলে পড়তে হতো। মনু শিকদার এর জন্য অনেককে ক্লাবের মধ্যে নিয়েও মারধর করেছেন। ক্লাবটি ভেঙ্গে ফেলায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভাইকে ধন্যবাদ জানাই। ‘
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, ক্লাবটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এটি খুব ভালো সংবাদ। ওখানে মদ-গাঁজা সেবন চলতো। সুতরাং এ উচ্ছেদে আমি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধুবাদ জানাই।