বরিশালের মুলাদীতে মুজিব শতবর্ষের ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে দুই সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন মুলাদী উপজেলার ইউএনও ও কৃষি কর্মকর্তার গাড়ি চালক জহির উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন ধাপে ৪৫৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
কাজিরচর ইউনিয়নের তিনটি আলাদা খাস জমিতে ৪১টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে ডিক্রীরচর সমিল এলাকার ৭২ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পান সরকারি গাড়ি চালক জহির উদ্দিন এবং ৭৪ নম্বর ঘরটি পান তার ভাই নাসির উদ্দিন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাসের প্রভাব খাটিয়ে জহির ও নাসির এ ঘর বরাদ্দ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গাড়ি চালক দুই ভাই ঘর বরাদ্দ পেলেও একদিনের জন্যও থাকেনি তারা। পরে জহির উদ্দিন তার ঘরটি ভাসানচর গ্রামের ফারুক বয়াতি ও লাকী বেগম দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেন। এছাড়া নাসির উদ্দিন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার জনৈক স্বপন চৌকিদারের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে ঘরটি দিয়ে দেন।
ভূমিহীন লাকী বেগম জানান, ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় প্রায় একবছর আগে কাজিরচর এলাকায় আসেন। থাকার জায়গা না পেয়ে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক নান্নু ফকিরের মাধ্যমে জহির উদ্দিনের নামে বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ওঠেন।
পরে ঘর হস্তান্তরের কথা বলে নান্নু ফকিরের মাধ্যমে কয়েক ধাপে ১ লাখ টাকা জহিরকে দিয়েছেন তারা। এখন জহির দলিল দেওয়ার জন্য আরও ২৫ হাজার টাকা দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জহির উদ্দিন বলেন, চাকরি সরকারি হওয়ার আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। সেখানে এক অসহায় দম্পতিকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা হানিফ শিকদার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি কিংবা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালকের চাকরি অনিয়মিত থাকাকালীন সময়ে ভূমিহীন সনদের ভিত্তিতে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো। তার চাকরি সরকারি হওয়ায় বরাদ্দ বাতিল করে ভূমিহীন পরিবারকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়ি চালক নাসির উদ্দিনের চাকরি এখনো পর্যন্ত সরকারি হয়নি। তিনি উপহারের ঘরে বসবাস না করলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।
এ ব্যাপারে মুলাদীর বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিক্রি করা অবৈধ। কারও বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বরাদ্দ বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।