১৪ বছর বয়সী কিশোরী বধূ জান্নাতুল ফেরদৌসি নগরীর রুপাতলী শের ই বাংলা সড়কের দিনমজুর রিপন হাওলাদারের মেয়ে। কিশোরীর মা নূপুর বেগম জানান, তার কন্যা রুপাতলী এলাকার এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সাত মাস আগে রুপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা অটোচালক রাকিব হোসেনের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে। মেয়ে নিখোঁজের পর থানায় জিডিও করেন তিনি।
পরে ছেলের বাবা বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে মীমাংসা করেন। এরপর থেকে মেয়ে ভাসানী সড়কের স্বামীর বাসায় থাকত। দুই মাস আগে মেয়েকে বাসায় দিয়ে যায় জামাই রাকিব। তখন দুই লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়ে মেয়েকে পাঠিয়ে দেবেন। আমাদের সামর্থ্যে না থাকায় মেয়েকে না পাঠানোর সিদ্বান্ত নিই। তবে কয়েকদিন আগে আবারও মেয়ে জামাইর সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর আর খোঁজ নেননি।
নূপুর বেগম বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে এক লোক তাকে হাসপাতালে আসতে বলে। তারা আসার পর মেয়ে শুধু এটুকুই বলেছে, তার স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। আর কিছু তিনি জানেন না।’
রিপন হাওলাদার বলেন, যৌতুকের দাবিতে জামাই, শ্বাশুড়ি ও ননদ খুব মারধর করত। কীভাবে ও কয়তলা থেকে ফেলেছে, সেই কথা মেয়ে কিছুই বলতে পারে নাই। ঘটনাস্থল রুপাতলী হাউজিংয়ের ২২ নম্বর সড়কের সারা-জারা ভবনে গিয়েও সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
কিশোরী বধূকে উদ্ধার করা ওই ভবনের প্রতিবেশি মো. নিজাম বলেন, ‘আমি বাইরে বের হওয়ার পর হঠাৎ করে উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পাই। পরে দেখি ভবনের সামনে রাস্তার ওপর কিছু পড়ে আছে। নারীর চিৎকার শুনে কাছে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় অউ কিশোরীকে দেখতে পেয়ে ট্রিপল নাইনে কল করে এ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।
পাঁচতলা সারা-জারা ভবনের মালিক স্বপন সরদারের ছেলে মেহেদি বলেন, কীভাবে এখানে আসলো বা কয়তলা ছাদ থেকে ফেলা হয়েছে তা কিছুই বলতে পারি না।
এ সময় ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই জোবায়ের বলেন, ‘ঘটনা কী ঘটেছে তা জানার জন্য এসেছি। প্রকৃত ঘটনা এখনো জানতে পারিনি।’
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘উপর থেকে পরে যাওয়ায় দুই পা ভেঙ্গে হাড় বের হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও মাথায় আঘাত পেয়েছে। পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালের মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক।’
মহিলা অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডের সেবিকা তমালিকা হালদার বলেন, ‘অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এখানে আনার পর জ্ঞান ফিরেছিল। তখন সে জানিয়েছে, স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এর বেশি সে কিছু বলতে পারেনি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, ‘মেয়েটি সুস্থ না হলে কি ঘটনা ঘটেছিল বলতে পারব না। পরিবারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার কিছু জানাতে পারছে না। মেয়েটিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো, সেটা নিশ্চিত বলা যায়।’