বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমার নির্দেশে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার আজ শুক্রবার এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে বাবুগঞ্জের ইউএনও নুসরাত ফাতিমা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ট্রলারে আগুনের বিষয়টি একটি দুর্ঘটনা।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার শুক্রবার বিকেলে সমকালকে বলেন, আমরা প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্তে কেউ দোষী হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আজ (শুক্রবার) ঘটনা যাচাই করতে বাবুগঞ্জ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিক আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে আশ্বস্ত করেছি যে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
ট্রলারে কীভাবে আগুন লাগল- এমন প্রশ্ন করা হলে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপণ করবে।
ট্রলারটির মালিক আনোয়ার হোসেন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউএনও নুসরাত ফাতিমার উপস্থিতিতে ও তার নির্দেশে তার দেহরক্ষী দুই আনসার সদস্য ডিজেল ছিটিয়ে ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
ট্রলার মালিক ও চালক আনোয়ার হোসেন শুক্রবার দুপুরে বলেন, আমার ট্রলার ভাড়া করে নিয়েছিলেন ইউএনও ম্যাডাম, আমি কোনো অন্যায় করলে আমারে শাস্তি দিত। ট্রলারটি পুড়িয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।
আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, যা ঘটেছে সবার সামনেই ঘটেছে। ট্রলারটি পুড়িয়ে ফেলায় আমি এখন দিশেহারা। আমি আর বেশি কথা বলতে পারব না।
ট্রলার চালক আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে তার ট্রলারে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে যান বাবুগঞ্জের ইউএনও-সহ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিমুল রানী পাল ও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। উপজেলার মোল্লারহাট, কাশিগঞ্জ, মীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জাল ও ইলিশ জব্দ করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কেদারপুর খেয়াঘাটে ফিরে আসেন তারা। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান, মৎস্য কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ইউএনও জব্দ করা ইলিশ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করেন। জব্দ করা জাল নদী তীরে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জাল পোড়ানোর সময় হঠাৎ ইউএনও আনোয়ারের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। আনোয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হন ইউএনও। এক পর্যায়ে তার দেহরক্ষী দুই আনসার সদস্যকে ট্রলারটিতে আগুন দিতে বললে তারা ডিজেল ছিটিয়ে আনোয়ারের ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, খবর পেয়ে আমরা ৯ টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে পারিনি।
অভিযানে অংশ নেওয়া বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, অভিযান থেকে ফিরে আমরা জব্দ করা ইলিশ এতিমখানায় বিতরণ করি। ট্রলার মালিক ও চালক আনোয়ার জব্দ করা কিছু বড় ইলিশ লুকিয়ে রেখেছিল। এজন্য ইউএনও তাকে বকাঝকা করেছিলেন। ইলিশ বিতরণের পর আমি নামাজ পড়ার জন্য চলে যাই। ট্রলারে আগুন লাগার সময় আমি সেখানে ছিলাম না।
বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুড়ে যাওয়া ট্রলারটি দেখেছি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাবুগঞ্জের ইউএনও নুসরাত ফাতিমার সরকারি মোবাইল নম্বরে (০১৩১৮-২৫৬৩..) বহুবার কল দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা সাংবাদিকদের বলেছেন, আনোয়ারের ট্রলার আমরা ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু সেটি পুড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ইউএনও বলেন, অভিযানে জব্দ করা কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। তিন দাবি করেন, যখন জব্দ করা ইলিশ মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হচ্ছিল তখন ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ট্রলারে আগুন লাগার বিষয়টি একটি দুর্ঘটনা।
ইউএনও নুসরাত ফাতিমার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্য মামুন হাওলাদার বলেছেন, জব্দ করা মাছ যখন বিতরণ করা হচ্ছিল তখন হঠাৎ ট্রলারে আগুন ধরে যায়।
অপর আনসার সদস্য সুকদেব দাস বলেন, ইউএনও স্যারকে ফাঁসানোর জন্য তার বিরুদ্ধে ট্রলারে আগুন দেওয়ার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সুত্রঃ সমকাল