আগামী জুন বা জুলাই মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে বরিশালসহ দেশের ৫টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।
চলবে নভেম্বর পর্যন্ত। সিটি নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ব্যাপক কর্মতৎপরতা ও প্রস্তুতি চলছে।
এর অংশ হিসেবে ৫ সিটির নেতাদের গণভবনে ডাকা শুরু হয়েছে। গণভবন থেকে দলীয় হাইকমান্ড শেখ হাসিনা নেতাদের বিভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া প্রার্থিতা নিয়ে দলে আলোচনাও চলছে জোরেশোরে। ৫ সিটির মধ্যে খুলনা, রাজশাহী ও বরিশালে বর্তমান মেয়রকেই আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি দুই সিটি গাজীপুর ও সিলেটে চমক থাকতে পারে।
সূত্রমতে, এবারের সিটি নির্বাচনে কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে আর ক্ষমা করা হবে না বলেও আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে হুশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো পাঁচ সিটি নির্বাচনে যাবে না বলে ইতোমধ্যে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। ফলে সদ্য হয়ে যাওয়া উপনির্বাচনগুলোর আদলে হতে পারে নির্বাচন। এতে প্রার্থী হতে পারেন জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারাও।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, খুলনায় তালুকদার খালেক, রাজশাহীতে এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ফের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সে অনুযায়ী এই তিন মেয়র মনোয়ন নিয়ে নির্ভার আছেন।
এই তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনে করেন, তারা তাদের সময়ে সর্বোচ্চাটা দিয়ে শহরকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। এর পুরস্কারস্বরূপ ফের মনোনয়ন পাবেন তারা। যদিও এ বিষয়ে কেউ চূড়ান্ত কথা বলতে রাজি হননি।
সিলেটে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোয়ন দেওয়া হবে- এমন খবরে বেশ জোরেশোরেই মাঠে রয়েছেন তিনি। আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী অতীতে একাধিকবার সিলেট-২ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি।
এবার তাকে সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন দিয়ে সিলেটবাসীকে চমক দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। তিনি নিজেও মনোয়নের বিষয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তার মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে বিস্তর কথা বলেছেন।
সিলেটে প্রয়াত বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান ছিলেন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা। তার মৃত্যুর পর সেভাবে কেউ সিলেট সিটি নির্বাচনে আলোচনায় আসেননি।
এ ছাড়া সেখানে রয়েছে বিভেদ ও মতবিরোধ। লন্ডন থেকে এনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়ে সেই বিভেদ ঘুচাতে চায় আওয়ামী লীগ। সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অবদান রয়েছে। এরই ফলস্বরূপ তিনি মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তারপরও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি সিলেট শহরে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়ার পর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন। পুরো শহরজুড়ে তার কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন।
এ ছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী, বাফুফের কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম মনোনয়ন চাচ্ছেন। থানা পর্যায়ের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরাও মনোনয়ন চাইবেন।
যে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সিলেটে নির্বাচনের সময়-গণনা শুরু হচ্ছে আগামী ১৪ মে। সে হিসেবে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে এই সিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
ফের দলে ভেড়ালেও গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এখনো আইনি জটিলতা তার পিছু ছাড়েনি। পিছু ছাড়েনি অভ্যন্তরীণ বিরোধও। বলা যায়, গাজীপুরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা তার সঙ্গে নেই।
যদিও গার্মেন্টস সেক্টরে তার জনপ্রিয়তা আছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে বাদ পড়লে আজমত উল্লাহ খানকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়।
এর আগেও তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ছিলেন। তিনিও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন চাইছেন। কারও সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বললেও তার ভক্ত-অনুসারীরা নিয়মতি পোস্টার সাঁটিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করছেন।
গাজীপুরে মনোনয়নের দৌড়ে বেশ আলোচনায় আছেন তুলনামূলকভাবে তরুণ সাবেক ছাত্রনেতা ও গাজীপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।
গাজীপুরে এবং গাজীপুরের প্রবেশদ্বারে তার পোস্টার ও ব্যানারই সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুজিববর্ষে তার উদ্যোগে শতাধিক ঘর প্রদান করা হয়েছে, যা গাজীপুর শহরের অসহায় মানুষকে দিয়েছেন। এ ছাড়াও টিউবওয়েল ও ড্রেন স্থাপন তিনি নিজ উদ্যোগে করে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চান গ্রিন, ক্লিন ও স্মার্ট সিটি। স্মার্ট সিটিজেন হওয়ার জন্য এসব খুব দরকার। আমি মনোনয়ন পেলে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করে যাব।’
এ ছাড়াও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রমুখ মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাদের বিষয়টি সব মনোনয়নের ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার দেয় আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের ২৭ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। সেই হিসাবে পরবর্তী নির্বাচন সময়-গণনা শুরু হচ্ছে আগামী ১১ মার্চ। সে হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ সিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটিতে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এ বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে রাজশাহীতেও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকেই ফের বেছে নিতে পারে আওয়ামী লীগ। যদিও এ বিষয়ে তিনি এখনই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই খুলনা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এ বছরের ৬ মে থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে বলে জানা গেছে। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম থেকে তার কোনো বিকল্প ভাবা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সূত্রটির দাবি, বরিশালেও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিকল্প কোনো প্রার্থীর কথা ভাবছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণে খুলনা ও বরিশালে বিকল্প প্রার্থীরও তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
বরিশাল সিটিতে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সর্বশেষ ভোট হয়। পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে ১৪ মে থেকে এবং ১৩ নভেম্বরের মধ্যেই।’