বদলে গিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চিত্র। গত তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার পরিবেশ হয়েছে যেকোনো সময়ের থেকে ভালো। ক্যাম্পাসে, হলে কোথাও নেই র্যাগিংয়ের মতো অপরাধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মতো এখন আর বুয়েটের হলে রাতভর ‘গেস্টরুম’ নামক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পসরা বসে না। ক্যান্টিনে নেই ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজি। ফলে খাবারের দাম ও মান উভয়ই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের (ঢাবি) তুলনায় কয়েকগুণ ভালো।
এ ছাড়াও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভয়ে সার্বক্ষণিক তটস্থ থাকতে হয় না আর কোনো শিক্ষার্থীকে। তারা এখন নিশ্চিন্ত মনে একাডেমিক পড়াশোনা এবং পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। প্রতিটি হলের নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। প্রতি ব্লকে সিসিটিভি এবং বহিরাগত প্রবেশ ঠেকাতে হলের প্রধান ফটকগুলোতে ডিজিটাল সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। রাখা হয়েছে অবাঞ্চিত ঘটনায় জরুরি প্রতিকারের জন্য এমারজেন্সি সঙ্কেতের ব্যবস্থাও। বাড়ানো হয়েছে ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত সব ধরনের সুবিধা।
বুয়েটের এতসব পরিবর্তনের পেছনে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার জীবনের বিনিময়ে আজকের এই বুয়েট পেয়েছে শিক্ষার্থীরা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্ট্যাটাস দিয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতভর ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে শহীদ হওয়া সেই আবরার ফাহাদ যেন মরে গিয়েই হয়েছেন একজন নায়ক। যার তাজা প্রাণের প্রভাবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দিতে পেরেছিলেন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১০ দফা দাবি। আর সেই দাবি পুরণের মধ্য দিয়েই এই আমুল পরিবর্তন।
গতকাল ছিল আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকী। এই উপলক্ষে নয়া দিগন্তের সাথে কথা হয় বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর। তারা তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা যে দশটি দাবি দিয়েছিল এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিবেশ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যারা ওই ঘটনার আগে হলে ছিলাম এবং এখনো আছি, তারা এটা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারি।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, আবরার হত্যাকাণ্ডের পরে শিক্ষার্থীদের দশ দফার পাশাপাশি আরো নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের আরো বেশি মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। সার্বিকভাবে আমাদের শিক্ষার্থী, কর্মচারী সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। দুর্ঘটনা রোধে আমরা একটা টিম গঠন করেছি।
এ দিকে শহীদ আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গতকাল সকাল ৯টায় আবরার ফাহাদের স্মরণে দেয়াল লিখন, বাদ আসর বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধ্যা ৬টায় বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে শোকসভা করেন। এ ছাড়াও আজ তারা দিনব্যাপী দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ, ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশ ও হলের ডাইনিংয়ের সামনে কলাম পোস্টারিংও করবেন। শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে একটি এতিমখানা ও একটি পথশিশু স্কুলে ২০০ জনের মধ্যে খাবার বিতরন করা হবে।