এসএসসি পরীক্ষার খাতা বা উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে ফেল করা অনেক শিক্ষার্থী পাস করেছে। আবার ফেল করা অনেক শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলো জাঁকজমকভাবে ফল প্রকাশের পর ফেল করা শিক্ষার্থীদের এভাবে ফল পরিবর্তন হওয়ার পেছনে উত্তরপত্র মূল্যায়ণে পরীক্ষকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে পরীক্ষার্থীরা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। ২০২২ সালে সারা দেশের এসএসসি পরীক্ষার ফলপ্রত্যাশীদের মধ্যে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৪টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
গত ২৮ নভেম্বর ২০২২ সালের এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরেও ফেল করে। আবার অনেকে কাক্সিক্ষত ফল বা জিপিএ লাভ করতে পারেনি। পরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে নিয়মমতো শিক্ষা বোর্ডগুলো উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন চেয়ে নোটিশ দেয়। এতে সারা দেশের প্রায় সব ক’টি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৪ জন পরীক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করেন। গতকাল শনিবার এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ফেল করা অনেক শিক্ষার্থী শুধু পাসই নয় অনেকে আবার জিপিএ ৫ পেয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যেসব শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর সার সংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো
শিক্ষা বোর্ড খাতা চ্যালেঞ্জ
করা শিক্ষার্থী ফেল থেকে
পাস করেছে ফেল থেকে জিপিএ
৫ পেয়েছে ঢাকা ৩৬০০০ ৭২৩ ১০৯ চট্টগ্রাম ১৪৫১৫ ৪৯৩ ১৮২ সিলেট ২০১৫৫ ৪১ ৩৮ ময়মনসিংহ ১৭৩১৯ ৩০ ৬৯ কুমিল্লা ২৩১০৩ ১৫৫ ৩৭ যশোর ১২৮১৭ ৩৭ ২৫ মাদরাসা ১৬৮৩৬ ২২৬ ৪১ কারিগরি ৮২২৩ ৪১৭ ২৭৪ রাজশাহী ৩১৫৪৪ ৫৮ ৩০
শিক্ষাজীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে আবেগের জায়গা থেকে বড় পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে এসএসসি বা সমমানের এই পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীই তাদের কাক্সিক্ষত ফলাফল হাতে পায় নাই। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ ক্ষুদে এই শিক্ষার্থীরা যদি তাদের কষ্টের প্রতিদান সঠিকভাবে না পায় তাহলে তাদের আশা ভঙ্গ হয়। আর এর প্রমাণ উত্তরপত্র পুনর্মুল্যায়ণে রেজাল্ট পরিবর্তন। এসএসসিতে ফেল করে অনেকে তাদের জীবনের গতিপথই বদলে ফেলে। তাই অভিভাবকদের দাবি এসএসসির উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ণ করা হোক।
ঢাকা বোর্ড : চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১০৯ জন শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে। সূত্র জানায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন স্কুলের ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করে। আবেদনকৃতদের মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭২৩ জন। এ ছাড়া নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০৯।
রাজশাহী বোর্ড : এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে রাজশাহী বোর্ডের ফেল করা ছয়জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ৫৮ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩০ জন পরীক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডের ৩১ হাজার ৫৪৪টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা। এর আগে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, রাজশাহী বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৪২ হাজার ৫১৭ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ড : চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় আগে ফেল করলেও পুনঃনিরীক্ষণে পাস করেছে ৪৫ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ২৪ শিক্ষার্থীর গ্রেড পরিবর্তন হয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে তারা। শিক্ষা বোর্ড জানায়, বোর্ডের আওতাধীন ১৪ হাজার ৫২৫ শিক্ষার্থী তাদের ২৮ হাজার ৬০৭টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করে। এতে ৪৯৩ শিক্ষার্থীর ৪৯৮টি উত্তরপত্রের ফলাফল পরিবর্তন হয়। ফলাফলে মোট জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ১৮২ শিক্ষার্থীর। তবে ফলাফলে নম্বর বাড়লেও জিপিএ বাড়েনি ২৫৫ জনের।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, প্রকাশিত ফলাফলে আগে ফেল করলে পরে পাস করেছে ৪৫ শিক্ষার্থী। তবে ফেল করা ৬ শিক্ষার্থীর নম্বর বাড়লেও তারা পাস করতে পারেনি। এর আগে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০২১ সালে পুনঃনিরীক্ষণে ২১২ এবং ২০২০ সালে ৬০৯ শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছিল।
মাদরাসা বোর্ড : এ দিকে দাখিল পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে মাদরাসা বোর্ড থেকে ফেল করা ২০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। মূল ফলে তাদের ফেল করানো হলেও খাতা চ্যালেঞ্জ করে এসব শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফল অর্জন করেছে। আর ফেল থেকে পাস করেছে ২২৬ জন দাখিল শিক্ষার্থী।
আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪১ জন পরীক্ষার্থী। পুনঃনিরীক্ষণে খাতা চ্যালেঞ্জ করা মাদরাসা বোর্ডের ৩৩৫ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার ২৫ হাজার ৫০২টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিল ১৬ হাজার ৮৩৩ জন শিক্ষার্থী। গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
সিলেট বোর্ড : এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৪১ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৮ জন পরীক্ষার্থী। সিলেট বোর্ড থেকে ফেল করা একজন শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সিলেট বোর্ডের ২০ হাজার ১৫৫টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
ময়মনসিংহ বোর্ড : এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ময়মনসিংহ বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৩০ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯ পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডের ফেল করা তিনজন পরীক্ষার্থী নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ময়মনসিংহ বোর্ডের ১৭ হাজার ৩১৯টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লা বোর্ড : এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে কুমিল্লা বোর্ডে ফেল করা তিনজন পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ১৫৫ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৭ জন পরীক্ষার্থী। কুমিল্লা বোর্ডের ২৩ হাজার ১০৩টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড : এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এ ফলে ২৭৪ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে। আর ফেল থেকে পাস করেছে ৪১৭ জন শিক্ষার্থী। মোট ৬২৩ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। তবে, কতজন শিক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে সে তথ্য জানেন না কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান জানান, ২৭৪ জন পরীক্ষার্থী নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে। আর ফেল থেকে পাস করেছে ৪১৭ জন পরীক্ষার্থী। মোট ৬২৩ জন পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে কতজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সে পরিসংখ্যান করা হয়নি।
যশোর বোর্ড : এসএসসি পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে যশোর বোর্ডে ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে চারজন শিক্ষার্থী। আর ফেল করা ৩৭ জন পরীক্ষার্থী পাস করেছে। আর নতুন জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৫ জন পরীক্ষার্থী। গতকাল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যশোর বোর্ডের ১২ হাজার ৮১৭টি খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছিল শিক্ষার্থীরা।