শুক্রবার, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ফারাক্কার প্রভাবে শুকিয়ে গেছে ৫৪ নদী

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৭ বার পঠিত

বছরের শুরুতেই পদ্মায় পানি নেই
চুক্তি অনুযায়ী কোনো বছরই পানি পায়নি বাংলাদেশ

প্রমত্ত পদ্মা নদী এখন মরা খাল। নদীটির বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। বর্ষা মৌসুম শেষ হতে না হতেই নদীতে ন্যূনতম পানির প্রবাহও নেই বললেই চলে। পানি না থাকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১০টি পিলারের নিচেই চর জেগে উঠেছে। যে ৫টি পিলার পানিতে আছে তার আশপাশেও মানুষ চাষাবাদ করছে বিভিন্ন ফসল। নদীতে পানি না থাকায় মাছও মিলছে না জেলেদের জালে। জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও জোগাড় করতে পারছেন না। ফারাক্কার কারণে উত্তরাঞ্চলের ৫৪টি নদী শুকিয়ে গেছে। সেগুলো এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের পদ্মা ও গঙ্গায় যৌথভাবে পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদী অববাহিকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও ভারতের গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে দুই দেশের প্রতিনিধিদল এই পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু পদ্মা নদীবেষ্টিত পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুর জেলার অন্তত দুই কোটি মানুষ ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পাবনা পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কিউসেক। গত বছরের একই সময় একই স্থানে পানির প্রবাহ ছিল প্রায় দ্বিগুণ। তাই পদ্মায় পানি প্রবাহ গত বছরের চেয়ে এবার অনেক কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

এ দিকে পদ্মার অবস্থা খুবই করুণ। পানি নেই। এমনকি ন্যূনতম পানির প্রবাহ নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১০টিই শুকনো চরে দাঁড়িয়ে আছে। যে ৫টি পিলার পানিতে রয়েছে, তার আশপাশে মানুষ চাষাবাদ করছে। নদীতে মাছ নেই। জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও জোগাড় করতে পারছেন না। এ দিকে ফারাক্কার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের ৫৪টি নদী শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতে হায়দরাবাদ হাউজে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ দেশের পক্ষে ৩০ বছর মেয়াদি পানি চুক্তি সই করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে দুই দেশের যৌথ বিশেষজ্ঞরা পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন হয়ে থাকে।
কিন্তু শুরু থেকেই চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। গত বছরের তুলনায় এবারও পানি কম পাওয়া গেছে। ফলে এই অঞ্চলে দিন দিন মরু ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নদীর বুকে নৌকার পরিবর্তে শোভা পাচ্ছে চাষাবাদ।

পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ৫ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর আড়াই শ’ থেকে ৩০০ ফুট নিচে রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে। এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে। তাছাড়া বৃষ্টিপাত না থাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের পদ্মা ও গঙ্গায় যৌথভাবে পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। ১ জানুয়ারি সকাল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদী অববাহিকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও ভারতের গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে দুই দেশের প্রতিনিধিদল এই পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।
ভারত পর্যবেক্ষক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের (সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন) নির্বাহী প্রকৌশলী বসন্ত কুমার ও প্রকৌশলী দীপক কুমার। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আড়াই হাজার ফুট উজানে ঈশ্বরদীর সীমানা ঘেঁষে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পয়েন্ট থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম ১০ দিন ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশ ৩ দফা ১০ দিনের হিসাবের ক্রমানুসারে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে। চুক্তি অনুযায়ী যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তারা ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্য দিকে, বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে একইভাবে পর্যবেক্ষণ চলছে।

পাউবোর হাইড্রোলজি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। গত বছর এই সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ১০ লাখ কিউসেক। এ বছর রয়েছে ১ দশমিক ৬ লাখ কিউসেক। পানি স্বল্পতার কারণে এবার নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চর জেগেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com