সোমবার, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক থেকে বেরিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১২ বার পঠিত

ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে বাংলাদেশ থেকে কথা বলা উচিত বলে মনে করেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ কেমন আছি, বিশেষ করে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যারা আছেন, তারা তাদের সেই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তো আমরা লক্ষ করেছি যে আমাদের মধ্যে আলহামদুল্লিলাহ চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় আছে। সেটিকে সামনে আরও কীভাবে ধরে রাখা যায়, সে জন্য আজকে আমরা কথা বলেছি। সবাই মন খুলে যার যার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বলেছেন যে একটি সুন্দর ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ- যে বাংলাদেশে কোনো ভয় থাকবে না, সেটি গড়বার জন্য তারা কাজ করছেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের ওলামায়ে-কেরাম, এ দেশের ধর্মীয় নেতৃত্ব- তারা তাদের জায়গা থেকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে আপনারা দেখেছেন যে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশের মুসলমানরা অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে। বিগত সরকারের শেষের দিকে আপনারা দেখেছেন ফরিদপুরে মসজিদের দুজন নির্মাণশ্রমিককে নির্মমভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা হত্যা করার পরও গোটা দেশের মুসলমানরা অত্যন্ত সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এটিকে যেমন সাধুবাদ জানিয়েছি, ঠিক তেমনই এটিকে ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছি। ’

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে সিনিয়র বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ছিলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সম্মানিত খতিব ছিলেন, আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদের খতিবসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন- প্রত্যেকেই একই সুরে কথা বলেছেন যে, আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ তৈরি করেছে তা পৃথিবীতে আসলেই বিরল। কোনো প্রোপাগাণ্ডায় যেন আমরা কোনোভাবেই পা না দিই এবং আমরা যেন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি সেজন্য এখানে সবাই কথা বলেছেন। মুসলিমরা ছাড়াও যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ ছিলেন তারাও কথা বলেছেন।’

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করছি যে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ যেটি ইতোমধ্যেই আলহামদুল্লিলাহ আছে, সেটিকে আমরাও আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারব এবং পৃথিবীর কাছে উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাতে পারব। এখানে প্রত্যেকেই বলার চেষ্টা করেছেন যার যার অবস্থান থেকে যে আমরা শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কাজ করছি। আমরা ৫ আগস্ট কিন্তু প্রত্যেকেই ফেসবুক লাইভে এসে সবাইকে সজাগ থাকার, সতর্ক থাকার এবং সংযমী থাকার, ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান করেছি। আলিফ হত্যাকাণ্ডের পরও মানুষকে আমরা সংযমী থাকার আহ্বান করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ইসলাম আমাদের অন্য ধর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ করতে বলে। প্রিয় নবী (সা.) আমাদেরকে মানুষ হিসেবে অন্য ধর্মকে মর্যাদা দিতে শিখিয়েছেন এবং সেই শিক্ষা ধারণ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি হয়েছে। আমরা আমাদের আশেপোশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নাসিহা শুনে থাকি, উপদেশ শুনে থাকি সেসব জায়গায় যখন দেখি যে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে, আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং দলে দলে তাদের উপাসনালয়গুলো ভাঙা হচ্ছে আমার মনে হয় সেই জায়গাটাতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার। ’

জনপ্রিয় এ ইসলামি বক্তা বলেন, ‘আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন, নিরাপদে থাকবেন। তাদেরকে নিরাপদ রাখবার জন্য আমাদের সরকার যেমন কাজ করছে, ধর্মীয় নেতৃত্বও তাদের জায়গা থেকে তাদের কাজ করছেন। আমরা মূলত এই বার্তাটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া চেষ্টা করেছি যে আমাদের জায়গা থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং আমরা থাকব। আমাদের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সবাই ভাই ভাই হয়ে আমরা আমাদের এই মাটিতে এই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।  সেই জায়গা থেকে আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের ফাটল নেই, আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিভেদ ও ফাটল যারা দেখাবার চেষ্টা করছে, তাদের সেই প্রোপাগান্ডায় বিশ্ববাসী যেন বিভ্রান্ত না হয় এবং আমাদের দেশের মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়- আমরা মূলত সেই বার্তাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ’

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ও আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘ভারতে বিশেষ করে আমাদের যে সমস্ত সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, সেখানে যে সমস্ত সহিংস ঘটনা ঘটছে যেমন উপহাইকমিশনে (সহকারী হাইকমিশন) হামলার যে ঘটনার কথা আপনি বলেছেন, এগুলোর কারণে আসলে আমাদের কথা বলা দরকার। আমাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে বলা হয়েছে যে তিনি যেন তার জায়গা থেকে, সরকারের জায়গা থেকে কথাগুলো বলেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আমাদের কথাগুলো বলব না, তখন আমাদের ওপর আরও চেপে আসা হবে। এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের অধিকারের কথাগুলো বলতে হবে। আমরা যে কলকাতাতে আক্রান্ত হচ্ছি, এর বাইরে মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। তাতে এই যে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তা থেকে আমরা উত্তরণ পাব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com