শুক্রবার, ০১:২২ অপরাহ্ন, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে রোগী, ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৫ বার পঠিত

ছয় বছরের শিশু নুজহাত দুদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তাকে মহাখালীর আইসিডিডিআর,বির অধীন ঢাকা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়ার কারণে নুজহাতের শরীরের সোডিয়াম, পটাশিয়াম আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তার শারীরিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন লাগতে পারে। নুজহাতের বাবা সায়মন জানান, তার আরেক মেয়েরও পেট খারাপ দেখা দিয়েছে। তাকে শিগগিরই হাসপাতালে ভর্তি করাবেন।

আইসিডিডিআর,বির এই হাসপাতালে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৩০০ ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা ৪৫০ থেকে ৫০০ জন বলে জানান সেখানকার চিকিৎসকরা। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে।

গত ৭ এপ্রিল ৪৬১ জন, ৮ এপ্রিল ৪৬৯ জন, ৯ এপ্রিল ৪১৪ জন, ১০ এপ্রিল ৪২৯ জন, ১১ এপ্রিল ৪৪৯ জন, ১২ এপ্রিল ৫৯৫ জন, ১৩ এপ্রিল ৫২৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৪৩৪ জন, ১৫ এপ্রিল ৪৯১ জন এবং আজ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা হাসপাতালে। অর্থাৎ গত ১০ দিনে ৪ হাজার ৫২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চিকিৎসকদের মতে, রাজধানীসহ সারা দেশ প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে রয়েছে। ছোট বড় সবাই গরমে কাবু হচ্ছে। আর তাতে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সময়ের তুলনায় এখন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে আসা রোগীর বেশিরভাগই শিশু। এমনকি ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে জনসমাগম বাড়লে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

যাত্রাবাড়ী থেকে ১৭ মাস বয়সী শিশু মিনহাজকে নিয়ে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে আছেন তার মা রোকসানা। বেডে বসে সন্তানকে স্যালাইন খাওয়াচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই ছেলের বমি আর পাতলা পায়খানা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ওষুধ সেবন করালেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। শরীর একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বুকের দুধও নিচ্ছে না। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। হাসপাতালেই কেটেছে তাদের ঈদ।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে দেড় বছরের শিশু ফারিনকে নিয়ে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বাবা রাশেদুল ইসলাম। তিনি আশঙ্কা করছেন—তীব্র গরমের কারণেই তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এই রোগ হয়। সাধারণত দিনে কারও তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহরে টেপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে এসে দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার খাওয়া ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিসট্যান্ট সায়েন্টিস্ট শোয়েব বিন ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের অসহনীয় গরমে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী ভর্তি হন। এখন তা ৫০০ ছাড়িয়েছে। এখনও অনেকে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেনি। বর্তমানে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে—তা অব্যাহত থাকলে রোগীর চাপ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গরমের সময়ে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়—এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নানান পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আইসিডিডিআরবি,র চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়া থেকে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভ হয় না। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন আর ওষুধ খেলে ডায়রিয়া ধীরে ধীরে ভালো হয়।

ডায়রিয়া হলে কী করবেন : এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খাবেন। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানা শেষে এক গ্লাস (২৫০ মি.লি.) খাবার স্যালাইন খাবেন। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে, আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন।

শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে খাওয়ান, যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর এক চা-চামচ করে স্যালাইন খেতে দিন। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি ২ বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে এবং কোনও অবস্থাতেই এটা বন্ধ করা যাবে না।

৬ মাসের বেশি বয়সী রোগী ওরস্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে। রোগীকে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার, যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ, ইত্যাদি খাওয়াবেন। রোগীকে কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়াবেন না।

৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াবেন। তারপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে দ্রুত কাছের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায় : পানি ফুটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন এবং ঠান্ডা করে পান করুন। ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি পানি-বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার আগে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোবেন।

পায়খানা করার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন। ফিডারে শিশুকে কিছুই খাওয়াবেন না। যদি খাওয়াতেই হয় তবে ফুটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ফিডারটি ধুয়ে নেবেন। ফিডারের নিপলের ছিদ্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com