তরুণদের হাতেই আগামী। তরুণরাই দেখায় নতুন পথ। এমন অনেক কথাই প্রমাণিত বাস্তবিক জীবনে। সিনেমার পর্দাও এর বাইরে নয়। সিনেমাকে এগিয়ে নিতে হলে হাল ধরতে হবে তরুণদেরই। তবে তাদের আগ্রহ দিতে হবে। দিতে হবে উৎসাহ। তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য কান চলচ্চিত্র আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তরুণদের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং উৎসব চলাকালীন তিন দিন ফ্রি এন্ট্রির সুযোগ। পাশাপাশি নবীন নির্মাতা যদি মনে করে বিশ্ব চলচ্চিত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে তা হলে তাকেও উৎসাহ দেওয়া হয়। সে ধরনের চলচ্চিত্র আলাদাভাবে প্রদর্শন ও বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে ২০২১ সালের নির্বাচিত সিনেমা থেকে এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও তরুণদের জয়জয়কার। সেরা চলচ্চিত্র যৌথভাবে হয়েছে মাতিয়া বানু শুকুর ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনাজলের কাব্য’। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন সিয়াম আহমেদ (যৌথভাবে), সেরা অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন ও তাসনোভা তামান্না। সেরা পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। বোঝাই যাচ্ছে দেশের বর্তমান পরিচালকদের তৈরি অনেক সিনেমা এবং কাজ গৃহীত হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। অনেক তরুণ প্রজন্ম অধীর আগ্রহে দেশে তৈরি সিনেমা নিয়ে আশাবাদী। তবে কমার্শিয়াল সিনেমার অনেক ক্ষেত্রে এখনো আরও দক্ষ ইউনিট দরকার বলে ধারণা তাদের। তা ছাড়া যে কোনো গতানুগতিক ধারার বাইরে গল্পের প্রবাহ নতুন প্রজন্মের দর্শকদের বেশি আকৃষ্ট করে। নতুন ধারার যে কোনো গল্পই এখন পর্যন্ত বেশ সুন্দরভাবে গৃহীত হয়েছে। ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার’জনদের নিয়ে দেশে আরও কাজ করা উচিত বলে জানান অনেকেই। জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, ‘আমাদের সময় অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পরিচালকরা, অভিনয়শিল্পীরা তাদের সেরা কাজটুকু উপহার দিয়েছেন। বর্তমানে যে তরুণ পরিচালকরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে তাদের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ। কারণ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তরুণ নির্মাতারা তাদের ভালোবাসা ও প্রচেষ্টা দিয়ে নিশ্চয়ই ভালো ভালো সিনেমা উপহার দিতে পারবে।’
শুধু গল্প নয়, সেই গল্পে থাকা চরিত্র, গান, সংলাপ সবকিছু মিলে তৈরি করা হয় এই চিত্র। গতানুগতিক ধারার বাইরে তৈরি সিনেমাও আজকাল সমাদৃত হচ্ছে মানুষের মধ্যে। তবে পছন্দের ভিত্তিতে মানুষের সিনেমার ক্ষেত্রেও পছন্দের ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। কেউ অ্যাকশন পছন্দ করে, আবার কেউ থ্রিলার, কেউ ড্রামা পছন্দ করে তো কেউ হরর। কারও কাছে আবার বায়োগ্রাফি অধিক প্রাধান্য পায়। পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো সিনেমা দেখতে বসে দর্শক কতখানি সন্তুষ্ট হতে পারছেন সেটাই বড় কথা। পরিচালক গাজী রাকায়েত বলেন, “আমরা যতই হইচই করি না কেন, আমাদের চলচ্চিত্র গত ৫০ বছরে বিশাল কিছু করে ফেলেছে, এমনটা ভাবার কিছু নেই। চলচ্চিত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গেলে দৈন্য বোঝা যায়। তো এ রকম একটি জায়গায় দাঁড়িয়েও ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর মতো একটি প্রডাকশন কান চলচ্চিত্র উৎসবে গেছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রডাকশনগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে, অমিতাভ রেজার কাজগুলোও হচ্ছে। সামনে আরও অনেক তরুণ আসছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র তরুণদের হাতেই হয়েছে। কাজেই তরুণদের বিষয়টি অনেক পজিটিভ। আরেকটি হচ্ছে, তারা অনেক আপডেটেড, প্রযুক্তিগতভাবেও। একজন তরুণ যখন চলচ্চিত্র নির্মাণে আসে, তখন সে সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিকে বুঝে কাজে হাত দেয়। যে কারণে তরুণদের ওপরই নির্ভর করে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ। তবে তরুণদের উচিত পুরনোদের অভিজ্ঞতার গাইডলাইনে চলা।”