রবিবার, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

পাহাড়ে ফের সক্রিয় পাচার চক্র, চীনে এক কিশোরীর বিভীষিকাময় কয়েক মাস

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১ বার পঠিত

পাহাড়ি নারীদের পাচারকারী চক্রের সদস্যরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাচার করছে চক্রটি। চীনে পাচার হওয়া এক মারমা কিশোরী সম্প্রতি দেশে ফিরে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার উনুপ্রু মারমা (ছদ্মনাম) নামের ওই কিশোরী জানায়, তাকে চীনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে চলতি বছরের ২৩ জুলাই চীনে পাচার করা হয়। চীনে নিয়ে প্রথমে একজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, পরে তাকে বদল করে আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। পরে চীনা হিল উইমেন্স সোসাইটির সহযোগিতায় গর্ভবতী অবস্থায় দেশে ফেরে সে। কিশোরীর ভাষ্য, দেশে ফেরার আগে দ্বিতীয় স্বামীকে ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। সেই টাকা পরিশোধ করেছে তাকে পাচার করা রাঙামাটি শহরের রাঙ্গাপানির বাসিন্দা মানসী চাকমা।

কিশোরীর অভিযোগ, মানসী চাকমা, খাগড়াছড়ির রামগড়ের ক্রাচিং মারমা, মহালছড়ির উচিমং মারমা, চীনা নাগরিক জ্যাকি তাঁকে চীনে পাচার করেছেন। জ্যাকি বাংলাদেশে একটি চীনা কোম্পানির বস। উনুপ্রু বলে, ‘পরিবারের অভাবে লেখাপড়া ফেলে চাকরির সন্ধানে চট্টগ্রামে পরিচিত এক বোনের কাছে যাই। সেখানে কিছুদিন চাকরি করে আরও ভালো বেতনের আশায় এক বান্ধবীসহ ঢাকায় যাই। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় ক্রাচিং মারমার সঙ্গে। ক্রাচিং চীনা এক কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর মাধ্যমে চীনা নাগরিক জেকি ও মানসীর সঙ্গে পরিচয়। মানসী চীনে থাকেন। সেই সুবাদে ক্রাচিং তাকে চীনে পাঠানোর জন্য প্রস্তাব দেয়। এরপর পাসপোর্ট, ভিসাসহ সব কাগজপত্র প্রস্তুত শেষে ২৩ জুলাই পাচার করা হয়। সেখানে এক বয়স্ক চীনা নাগরিকের হাতে তুলে দেন মানসী। পরে তাকে আরেক চীনা যুবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ক্রাচিং মারমা বলেন, ‘উনুপ্রুকে চীনে নেওয়ার কাজটি করেছে মূলত মানসী। সে সব কাজ করেছে। তবে আমি এ দায় এড়াতে পারি না।

এ জন্য আমি উনুপ্রুকে দেশে ফেরার জন্য বিমান ভাড়া দিয়েছি। বাকিটা মানসী ম্যানেজ করেছে।’

কে এই মানসী

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের ফকিরাছড়ি এলাকার তেছড়ি গ্রামে জন্ম মানসীর। সেখানে বড়হলক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পড়েন। পরে রাঙামাটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে যান। সেখান থেকে চীনে যান মানসী। চীন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তাঁর। চলতি ডিসেম্বরেও বাংলাদেশে আসেন মানসী। অভিযোগ পাওয়া গেছে, চম্পা চাকমা নামের এক নারীকে নিতে এসেছিলেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রলোভন দেখিয়ে বরকল উপজেলার হরিণা এলাকার এক নারীকে চীনে পাচার করেন মানসী।

পাচার হওয়া ওই নারীর বোন বলেন, ‘নানান প্রলোভনে আমি আমার বোনকে মানসীর মাধ্যমে চীনে পাঠাই। আমার বোনের একটি মেয়েশিশু ছিল। শিশুটি আমার কাছে আছে। এখন হাইস্কুলে পড়ে। আমাকে খরচ চালাতে হয়। আমার বোনকে চীনে নিতে মানসীর মা আমাকে প্রতিদিন চীনের কথা বলতেন। মোবাইল ফোনে মানসীকে ভিডিও কল দিতেন। সুখের গল্প বলতেন। প্রতি মাসে টাকা পাঠাবেন। এ ছাড়া চীনে যেতে রাজি হলে এক লাখ টাকা পাব। এ ছাড়া দুটি দামি মোবাইল ফোন দেবেন। শর্ত ছিল, আমার বোনের মেয়ে আছে, সেটি বলা যাবে না। বোনকে চীনে পাঠানোর পর মানসী ও তাঁর মা প্রতিশ্রুতি রাখেননি।’

আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে মানসীর সখ্য

চীনা ভাষা জানার সুবাদে দেশটির নাগরিকদের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক মানসীর। অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমী ওরফে হেলির পার্টনার মানসী। সুমীর সংগ্রহ করা নারীদের চীনে পাঠাতেন তিনি। নারী পাচার করতে গিয়ে ঢাকা থেকে গত ৯ জুন গ্রেপ্তার হন সুমি। সে সময় ঢাকায় ছিলেন মানসী। মূলত সুমীর চালানটি নিতে এসেছিল মানসী। সুমী গ্রেপ্তার হলে বেশ বেকায়দায় পড়েন মানসী। বর্তমানে সুমী জামিনে থাকলেও জেলে আছেন তাঁর স্বামী জিসাও সুহুই।

এ বিষয়ে মানসী বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আপনার কাছে হাজারবার মাফ চাই। আমি এ কাজ আর করব না। উনুপ্রুকে আনতে চীনা পরিবারকে যে টাকা দিতে হয়েছে, সেটা জেকি দিয়েছে। চীনা ঢাকায় ৫০ হাজার আরএমবি দিতে হয়েছে। জেকি আমার স্বামীর বড় ভাই।’

মহালছড়ি থানার ওসি মো রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার উপজেলা থেকে চীনে নারী পাচার হয়েছে, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অপরাধী ধরতে ব্যবস্থা নেব। পাচারের সঙ্গে জড়িত এই উপজেলায় উচিমং মারমা নামের একজনের নাম শোনা যাচ্ছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com