পারিবারিক আদালত আইনের অধীনে বিচারিক আদালতে হওয়া মামলার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ মর্যাদার অন্যান্য আদালতেও আপিল করা যাবে। এছাড়া পারিবারিক আদালতের মামলার কোর্ট ফি ৫০ থেকে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন বিধান রেখে ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ-১৯৮৫’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অধ্যাদেশটির নতুন নামকরণ হচ্ছে ‘পারিবারিক আদালত আইন-২০২২’। রোববার সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনটিকে লেজিসলেটিভ বিভাগের যাচাই সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিচারিক আদালতে হওয়া এ সংক্রান্ত মামলার আপিল শুধু জেলা জজের আদালতে করার বিধান ছিল। এতে জেলা জজের ওপর মামলা শুনানির চাপ বাড়ছিল। মামলার চাপ কমাতেই আইনে এ সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইন ও বিচার বিভাগের উপস্থাপন করা এ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাস পর গতকাল থেকে আবারও ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০২২’-এর নীতিগত অনুমোদন প্রার্থনা করেছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত এই খসড়া আইনের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পারিবারিক আদালত আইনে যে আদালতে রায় হয় সেটার আপিল কর্তৃপক্ষ ছিলেন জেলা জজ। এই জায়গায় সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে আরও জজ আছেন, নারী-শিশু বা শ্রম আদালত। এ সংক্রান্ত মামলার আপিল নিষ্পত্তি শুধু জেলা জজের দায়িত্ব থাকায় উনার ওপর চাপ পড়ে যায়। সরকার যদি মনে করে কোনো জেলাতে আপিলের জন্য অতিরিক্ত মামলা আছে, সেক্ষেত্রে জেলা জজ পর্যায়ের অন্যান্য যে জজরা রয়েছেন, তাদেরও আপিল আদালত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মামলার ক্ষেত্রে বর্তমানে ৫০ টাকা ফি আছে। সেটা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনটি সামরিক শাসনামলের। ১৯৮৫ সালে ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। এতে দাম্পত্য কলহ, তালাক, বিয়ে এবং শিশুদের ভরণপোষণের বিষয়গুলো আছে। পদ্মা সেতু নিয়ে অভিনন্দন প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানান, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বিশেষ করে জনগণ যেভাবে সহায়তা দিয়েছে এবং উৎসাহ দিয়েছে, সেটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল : পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আসন্ন ঈদের আগে মোটরসাইকেল চালুর সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
খন্দকার আনোয়ার বলেন, পদ্মা সেতুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ ক্যামেরা বসবে। স্পিডগানও বসানো হচ্ছে। এগুলো বসলে তারপর ওনারা সুবিধাজনক সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করা যায়। আমার মনে হচ্ছে, ঈদের আগে মোটরসাইকেল চালু হওয়া খুবই কঠিন।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু চালুর পরদিন অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেলও চালু হয়েছিল। তবে একদিন পরই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।
পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু : পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খুলে যাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্ট রেলিংটি মূল সেতুর অংশ নয়। এটি আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে দুই পাশে যে পর্যন্ত ওয়াল আছে সেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে। কিন্তু আমাদের সড়ক ও জনপথের মানদণ্ড চার ফুট। সেজন্য আরও এক ফুট উঁচু করে রেলিং দেওয়া হয়েছে। খন্দকার আনোয়ার আরও জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন বিকালে কোরিয়ান এক্সপ্রেস করপোরেশন দায়িত্ব নিয়েছে। সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।