‘আমি নিজের ঢোল নিজে পিটাই না, আমার পরিচয় পাবলিক দেবে, আমি না,’ এই বলে প্রিয়তমায় এন্ট্রি নিয়েছেন শাকিব খান। তার আগে থেকেই অবশ্য স্ক্রিনে শাকিব খানকে দেখে সোল্লাস চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলেন দর্শক। আর এই সংলাপ শোনার পর দর্শকের উৎসাহ যেন আরও বেড়ে গেল।
এই ঈদে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খানের সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। জ্যামহীন ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে মধুমিতা সিনেমা হলে গিয়ে চমকে উঠতে হলো। ছয়টার শো শুরু হতে এখনো এক ঘণ্টা বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই টিকিট শেষ, কাউন্টার বন্ধ। শো শুরুর ঠিক পাঁচ মিনিট আগে তিন গুণ বেশি টাকায় মিলল টিকিট। টাকাটা দেওয়ার সময় ভাবছিলাম, পয়সা উশুল হবে তো? সিনেমা দেখার পর মনে হয়েছে, পয়সা উশুল। সিনেমা নির্মাণে সময় কম পেলেও হতাশ করেননি পরিচালক। আর মুগ্ধ করেছে সিনেমার গান। তার মধ্যে শেষের ‘ঈশ্বর’ গানের সঙ্গে অনেক দর্শকের চোখে পানি দেখা গেছে। সিনেমা শেষেও কানে বেজেছে গানের ‘ঈশ্বর কি তোমার আমার মিলন লিখতে পারত না’ লাইনটা।
শাকিব খানও নতুনভাবে নতুন লুকে নিজেকে তুলে ধরেছেন। তার এক্সপ্রেশন, সংলাপ, ভিন্ন ভিন্ন লুক দর্শকের মন জয় করেছে। এ যেন পরিপূর্ণ এক শাকিব খান। স্বভাবতই শাকিব খানকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়েছেন পরিচালক। প্রায় সারাক্ষণই পর্দায় তিনি উপস্থিত! প্রথম সিনেমা হিসেবে ভালোই অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ইধিকা পাল। পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর এক্সপ্রেশনের পরিবর্তন, সংলাপ সবার মন কেড়েছে। দেশি পোশাকে ইধিকাকে খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। ভিলেন চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিমও ছিলেন সাবলীল। আঞ্চলিক ভাষাটা ভালোভাবে রপ্ত করতে না পারলেও তাঁর মুখে আধো আধো কক্সবাজারের আঞ্চলিক বুলি শুনে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় বোঝা গেছে, তাঁরা বেশ বিনোদিত।
সিনেমার শুরুতেই মারা যান সুজন এবং তাঁর ম্যানেজার। রোমান্টিক সিনেমা দেখবেন বলে আশা করেছিলেন দর্শক, কিন্তু প্রথম দৃশ্যেই খুন দেখে অবাকই হয়েছেন তাঁরা। সুজনের মৃত্যুকে অ্যাক্সিডেন্ট বলা হলেও তাঁর ভাই সুমন (শাকিব খান) মনে করে তার ভাইকে খুন করা হয়েছে। সুজনের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যবসার অংশীদার পাওনা টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন। ব্যবসার পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধার এবং ভাইয়ের মৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে কক্সবাজারে আসে সুমন। আর সেখানেই ইতির (ইধিকা পাল) সঙ্গে সুমনের পরিচয়। শুরু হয় সুমনের সঙ্গে ইতির দুষ্টুমি।
সিনেমার মূল গল্পে পৌঁছাতে একটু দেরিই করেছেন পরিচালক। কিন্তু দর্শককে বিরক্ত হতে দেননি। নায়িকার সরলতা, ভুলভাল ইংরেজি, শাকিবের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকানো, ন্যাকামি ছিল উপভোগ্য। ভাইয়ের খুনিকে খুঁজে বের করা এবং সুমনের প্রেম—এ দুই গল্প সমান্তরালে না টানলেও সিনেমার শেষের দিকে এসে সব পুষিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। বিরতির আগে যতটা ঝিমিয়ে পড়েছিল, বিরতির পর ঠিক ততটাই উৎকণ্ঠ হয়ে ওঠেন দর্শক। তাঁরা আগে থেকে ধারণা করতে পারছিলেন না, কোন দিকে মোড় নেবে ঘটনা। বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমায় এমনটা ঠিক দেখা যায় না।
২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের সিনেমার দেড় ঘণ্টা পর তো দর্শক ভেবেছিলেন সিনেমা শেষ। কিন্তু তার পরই শুরু হয় আসল টুইস্ট। শেষের অংশ দেখে বলাই যায় পয়সা উশুল। মধুমিতা হলের এসি ঠিকমতো কাজ করেনি, তারপরও গরমের মধ্যে বসে পুরো সিনেমা দেখেই বের হয়েছেন দর্শক। এখানেই ছিল পরিচালকের মুনশিয়ানা। দর্শককে আটকে রাখতে পেরেছেন তিনি। আর এই দর্শকদের মধ্যে সব বয়সী মানুষই ছিল।
রোজার ঈদের পর শুটিং শুরু করে কোরবানির ঈদে ছবি মুক্তি দেওয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পরিচালকের জন্য। ফলে সিনেমায় ছোটখাটো কিছু ভুল ছিল। ছোটখাটো এই ভুলগুলো উপেক্ষা করলে দর্শককে বিনোদন দেওয়ার মতো পরিপূর্ণ এক সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। সিনেমাটোগ্রাফি, লোকেশন, সাউন্ড, কস্টিউম, মেকআপ, আলোতে সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করেছে টিম ‘প্রিয়তমা’। আর এতে তারা সফলও হয়েছে। মনে হয়েছে, এ যেন বাংলা সিনেমার নতুন এক অধ্যায়।
সুত্রঃ প্রথম আলো