ভারতের প্রিয় নেতা। ইংরেজদের অত্যাচার থেকে যে নেতা প্রতিবাদ, আন্দোলন করে একাধিবার জেল খেটেছে, সারাবিশ্বে নেতাজি নামে খ্যাত। সেই প্রিয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলতো, হে ভারতের মানু্ষ তোরা আমাকে রক্ত দিলে আমি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিবো।’
এই প্রিয় নেতাজির বাড়ি দেখবো বলে ভাবছি, বাংলাদেশ থেকে। যতবার কোলকাতা তাঁর বাড়িতে গিয়েছি, প্রিয় নেতার ইতিহাস জানতে কৌতুহল জেগে ওঠে।
সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরপর বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যায়। কোলকাতার মিউজিয়ামের সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার।
গত মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখ দুপুরে কোলকাতা শহরের এলগিন রোডে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু তিন তলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়ি থেকে কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪১ সালের ১৬ জানুয়ারি মহানিষ্ক্রমণ হয়েছিলেন।
এই প্রিয় নেতার বাড়ি এখনও পড়ে রয়েছে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মানুষ ছুটে আসেন। ১০ টাকার টিকিটে প্রবেশ করে যতক্ষন ইচ্ছে দেখতে পারবেন। কোন বিষয় জানার থাকলে জানতে পারবে। তথ্য লিখে নিতে পারবে। আজ তাঁর তরবারি, পাগড়ি, লাঠি, জুতা, চশমা ও পোশাকসহ সব কিছু পড়ে রয়েছে জাদুঘরে। রয়েছে লাইব্রেরি, জাদুঘর, বৈঠকখানা, বিশ্রামাগার ও ঘুমানোর ঘর। তিনি বই পড়তেন। অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার কথা ভাবতেন এই প্রিয় নেতা। আজ তিনি নেই রয়েছে তাঁর আদর্শ। অবিভক্ত ভারত স্বাধীনতার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এই প্রিয় নেতা।
জানা গেছে, সুভাষ চন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন।
যুদ্ধের সূচনালগ্নে নেতাজি লুকিয়ে লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষ চন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন। উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষ চন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরুসহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষ চন্দ্র বসু গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তাকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তিনি ভারতে ফিরে এলে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।
বাড়ির কিছু কিছু স্পট থেকে ছবি করা বিধি নিষেধ রয়েছে। যেখান থেকে ছবি করা যাবে সেসব জায়গা থেকে কিছু ছবি তুলেছি। লাইব্রেরি থেকে একটি বই কিনে নিলাম। মিউজিয়ামের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছে এসব ইতিহাস জেনে অনেক ভালো লেগেছে, মনে দৃঢ়তা বেড়ে যায় নেতাজি জীবন বৃত্তান্ত শুনে। একজন বিট্রিশ বিরোধী আপোষহীন নেতা ছিলেন। ভারতে স্বাধীনতার কথা ভাবতেন। ইংরেজদের অত্যাচার থেকে মুক্তির কথা ভাবতেন এই প্রিয় নেতা। যার আত্মত্যাগ সারা বিশ্ব আজও মনে করে।