বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী সংস্থার সংখ্যা বাড়ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের ১৯৯টি সংস্থা পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করেছিল। এই বছর সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাও ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি; এবার তারা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোট পর্যবেক্ষণে এবার ২১০ প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যাচাই-বাছাইয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে স্থানীয় এসব প্রতিষ্ঠান আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে। ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বৈঠক করেছে।
জানতে ১৫ দিনের মধ্যে সময় দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তা হলে মাননীয় কমিশন উভয়পক্ষকে ডেকে শুনানি দেবেন। শুনানির পর কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, বিদ্যমান নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১১ জুলাই। সে ক্ষেত্রে ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন চেয়ে আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর (২০১৮ থেকে ২০২২ ডিসেম্বর) ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েও কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি, সেগুলোর আবেদন বাতিল হবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে নিবন্ধিত হতে পারেনি; কিন্তু মেয়াদ থাকাকালীন সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ বা উপনির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকলে সেটির আবেদন যোগ্য বিবেচিত হবে।
জানা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। এক বছর করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে তা পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে ১৩৮ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০১১ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১২০টিকে। এগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়। নবম সংসদ নির্বাচনে দেশি ৭৫ প্রতিষ্ঠান ভোট পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি, তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা কমিশন ১১৯ প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিবন্ধন দিয়েছিল।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ৫৯৩ জন বিদেশি এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন দেশি পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। দশম সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় পর্যবেক্ষকও কম ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ওই নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি এবং স্থানীয় ৩৫টি সংস্থার ৮ হাজার ৮৭৪ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এ ছাড়া ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। সেই নির্বাচনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় ব্যাংককভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আনফ্রেল নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় তারাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগেই পর্যবেক্ষক পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইইউ। গত ১৮ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল। সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ইতিবাচক। এ ছাড়া ব্রিটিশ এমপিদের একটি প্রতিনিধি দলও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ফরেন অবজারভার সম্পর্কে আমাদের একটা পলিসি আছে। তারা আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেব স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কারণ বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সুরাহা হতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি প্রতিনিধিরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইসি বরাবর পর্যবেক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স এলে তাদের অনুমতি দেওয়া হবে। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।