দুটি লক্ষ্যকে টার্গেট করে সামনের দিকে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রথমত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দ্বিতীয়ত দলের জাতীয় সম্মেলন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলন। এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশনার আলোকে জাতীয় নির্বাচন ও সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই মূলত সব কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে দলটি। এজন্য বিশাল রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সেই আলোকে চলছে প্রস্তুতি পর্ব।
দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, গত কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দলের জাতীয় সম্মেলন। এদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতিও আগেভাগে নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার জরিপ করিয়ে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজে হাত দিয়েছেন নেত্রী। জরিপের ফলাফলও আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক আছে, যাদের মনোনয়ন দিলে নিজ যোগ্যতায় জিতে আসতে পারবে বিভিন্ন সংস্থার জরিপের মাধ্যমে এমন শতাধিক আসনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। অন্য আসনগুলোতেও প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে বিতর্কিত এমপি ও নেতাদের মূল্যায়ণ না করার বিষয়েও জোরালো আলোচনা উঠেছে দলের মধ্যে।
সূত্র বলছে, আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগ জনসভা করবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই জনসভার মাধ্যমে শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে নির্বাচনী বার্তা দেবেন। গত একযুগেরও বেশি সময়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চিত্র তুলে ধরে সাধারণ জনগণের কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন। পাশাপাশি তিনি তুলে ধরবেন বিএনপি জোট আমলের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের চিত্র। এভাবেই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রধান দেশের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে অনুষ্ঠিত জনসভায় সরাসরি অংশ নিয়ে দলের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। এর আগেই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। আমরা একসাথে সমন্বয় করে দুটোরই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আশা করি, জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন হবে। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সম্মেলন বাস্তবায়ন করার জন্য ইতোমধ্যে ১১টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে নেত্রী সাদামাটাভাবে একদিনেই সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।
জানা গেছে, দলের মনোনয়নের বিষয়টি দেখভাল করবেন শেখ হাসিনা। বিশাল জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই জনগণের চাহিদানুযায়ী একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে। নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিও কাজ শুরু করে দিয়েছে। জনগণ কী চায় সেই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করার চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষভাবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অনেক মানুষ। ওই সব মানুষের কথা ভেবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশকে শক্তিশালী করা এবং বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে এবারের ইশতেহারে।
নির্বাচনের আগে দল গুছিয়ে নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে নামাতে চায় হাইকমান্ড। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করা, সারা দেশে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠন করা, তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে কমিটি গঠন করাসহ দল গোছানোর কাজও শুরু করে দিয়েছে আটটি বিভাগীয় টিম। তা ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলও করতে হচ্ছে। এসব কিছু মাথায় রেখেই বড় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আগেভাগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি সেরে নিতে মাঠে নেমেছে সরকারি দল।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা আলাপকালে বলেন, সরকারের সাফল্য ও বিরোধী দলের ব্যর্থতা জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এজন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফরকালে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভা সমাবেশে এখন থেকেই সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যগুলো জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে ফোকাস করবে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ মেগা প্রজেক্টগুলোর সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছতে কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংঘটিত নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি জোটের ডাকা আন্দোলনের মধ্যে সংঘটিত নেতিবাচক বিষয়গুলো জনগণের সামনে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরবেন দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের নেত্রী ইতোমধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলন বাস্তবায়নে উপ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে এক বছরের কিছু সময় বেশি আছে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার আমরা এখন থেকেই তা শুরু করেছি। মনোনয়নের বিষয়টি দেখবেন আমাদের দলের প্রধান। আর আমরা যে কাজটি করব তাহলো তৃণমূলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেটা সমাধানের মাধ্যমে দলকে গোছানো।