আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার প্রত্যাশা করলেও মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি অংশগ্রহণ করলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বিষয়টি এমন নয়। বিএনপি ছাড়াও এ দেশে নিবন্ধিত আরো অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে যাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচনের কলেবর বৃদ্ধি পাবে এবং নির্বাচন আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এরই মধ্যে বিএনপি ছাড়াও এ দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
যদিও বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার জোরালো চাপ রয়েছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা এ নিয়ে দেনদরবার করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মতে, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অধিকার। এটা কারো ওপর কারো দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। তেমনি বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এটা আওয়ামী লীগও প্রত্যাশা করে। কারণ বিএনপি একটি বড় দল, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ওই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট প্রদান করবে। কিন্তু বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এটা তো সাংবিধানিকভাবে এলাউ করে না। কারণ উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গত এক যুগ আগে বাতিল হয়েছে। সংবিধান সংশোধন হওয়ার পর দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার একটিতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, অন্যটিতে অংশগ্রহণ করেও নির্বাচনের দিন মাঝপথে গিয়ে বয়কট করেছে।
নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এটা তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। তবে বিএনপির জন্য সাংবিধানিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হবে না। নির্বাচনকালীন বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো মেনে নিয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিদেশী সংস্থার যে প্রতিনিধিরা আসছেন তাদেরকেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক সমাবেশে বলেছেন, বিএনপি চক্রান্ত করে শেখ হাসিনার সরকারকে হটাতে চায়। ৭৫ আর ২০২৩ সাল এক নয়। ২০০১ আর ২০২৩ এক নয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক অস্বাভাবিক সরকার বাংলাদেশে আর হবে না। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বিএনপিকে জোর করে আনা হবে না, তবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।
গতকাল রোববার দুপুরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরামে’র প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ওই প্রতিনিধিদেরও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয় এবং বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এর আগেও আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিদল, ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিবৃন্দসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা সরকার প্রধান, মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বের সাথে বৈঠক করেন। গতকাল বৈঠক শেষে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, সমস্ত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হয় আমাদের দেশেও ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেভাবে চলতি সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে আমাদের দেশেও বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তিনি আরো বলেন। সমস্ত দল যাতে অংশগ্রহণ করে সে জন্য নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আমরা আহ্বান জানাই, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল যেন আগামী নির্বাচনে অংশ নিক।
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। সংবিধান অনুযায়ী যখনই নির্বাচন হবে, জনগণকে সাথে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ আশা করে, সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তার মানে এই নয়, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে আসার দায়িত্বটা বিএনপিকেই নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের মানুষের প্রত্যাশার সাথে তারা থাকবে কি, থাকবে না এ দায়িত্ব বিএনপির। আওয়ামী লীগ আশা করে, বিএনপির সাথে যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে তারা সবাই নির্বাচনে আসুক। তাদের সবার অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক, প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যার যার দায়িত্ব সে পালন করুক। এখানে চাপের কোনো বিষয় নেই।