দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার করে, জুলুম চালিয়ে জামায়াতের অগ্রযাত্রাকে রুখা যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আজ পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সকলের দাবি একটাই, দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অথচ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য নির্বাচনের নামে একটি প্রহসন মঞ্চস্থ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ সেই প্রহসন আর মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে সদর উপজেলার ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের সকল ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সরকার জামায়াতে ইসলামীর ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করতে, জামায়াতের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে এবং গণমানুষের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সমাজে প্রতিষ্ঠিত সকল বিধানের ওপরে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মহান আল্লাহ রাসূল সা:-কে নির্দেশনা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার সেই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের এই ভূ-খণ্ডে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য প্রচলিত রাজনীতির মত যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি জামায়াতে ইসলামী করে না। জামায়াত এদেশে সৎ লোকের নেতৃত্ব গ্রহণ ও রাষ্ট্রীয় শক্তি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এটাই ইসলামের সাধারণ শিক্ষা। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আমরা আমাদের আখেরাতকে সুন্দর করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দুনিয়ার মানুষকে বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষকে বসবাসের উপযোগী একটি শান্তিপূর্ণ ভূ-খণ্ড উপহার দেয়া। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে এদেশ সুখি-সমৃদ্ধশালী একটি দেশে পরিণত হবে। যেখানে কোনো অন্যায়-জুলুম থাকবে না, অন্যের অধিকার হরণ করা হবে না। যেখানে মানুষের অধিকার দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যাবে। যার যা প্রাপ্য সঠিকভাবে তিনি তা পাবেন। এই ধরনের একটি সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জামায়াত এদেশের জনগণকে আল্লাহমুখী করে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, রাসূল সা: একদল যোগ্য লোক তৈরি ও তাদেরকে সংঘবদ্ধ করে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছেন। যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদেরকে চারটি ফর্মুলার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। প্রথমত, আল্লাহর আয়াত পেশ করে সত্যের দাওয়াত সমাজের সকলের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত, মানুষকে কুরআনের নৈতিকতার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ-পবিত্র-সংশোধন কার্যক্রম পরিচালনা। তৃতীয়ত, এসব মানুষকে আল্লাহমুখী করে গড়ে তোলা। চতুর্থত, সমাজ-দেশ-রাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য-দক্ষ করে ঈমানের ভিত্তিতে লোক তৈরি করা। এভাবেই আল্লাহর রাসূল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেককে কুরআনের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। বিজ্ঞান-কৌশল-বুদ্ধিমত্তা প্রজ্ঞা সবকিছুকে কাজে লাগিয়ে মূলত ইসলামকে প্রতিষ্ঠা ও সকল বাধা বিপত্তিকে মোকাবেলা করার মতো যোগ্য লোক প্রস্তুত করেছিলেন। একইভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য, এই জনপদকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জনপদে পরিণত করার জন্য কুরআন এবং হিকমার জ্ঞানে উদ্দীপ্ত একদল যোগ্য লোক তৈরি করতে হবে। যারা নিজের ঈমানি চেতনাকে জাগ্রত করে সমাজ পরিবর্তনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। তিনি কুরআনের নির্দেশনা ও রাসূলের (সা) গৃহীত কর্মসূচির আলোকে সেই প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ইউনিয়ন দায়িত্বশীলদের উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল জামায়াত নেতাদের মুক্তির জোর দাবি এবং দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা আমির অধ্যাপক আমানুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কবির, মুক্তার হোসেনসহ জেলা জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
-প্রেস বিজ্ঞপ্তি