নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও পথে পথে ঘুরছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও সেখানে ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধানের পদ বাদ রাখা হয়েছে। যদিও এই পদে অনেক আগেই নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়েছে এনটিআরসিএ। সেখানে সুনির্দিষ্ট ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যদিও এনটিআরসিএ এখন বলছে ইবতেদায়ি প্রধানের পদটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হবে। কাজেই এই পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
এ দিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষকরা জানান, ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধনধারীদের বাদ রেখে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনটিআরসিএ। এতে অন্যান্য পদের নিবন্ধনধারীরা শিক্ষকতা করলেও বঞ্চিত থাকছে ইবতেদায়ি প্রধান পদের নিবন্ধনধারীরা। ফলে শিক্ষকশূন্য হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিশুরা ভালোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এতে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র মতে এনটিআরসিএর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর আলোকে বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে পঞ্চদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০১৯ সালে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০২০ সালে ১৫ জানুয়ারি ১১ হাজার ১৩০ জনকে উত্তীর্ণ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। ২০২১ সালে ৩০ মার্চ শূন্য পদে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এখানে ইবতেদায়ি প্রধান পদে উত্তীর্ণ নিবন্ধনধারীদের আবেদনের সুযোগ রাখেনি। এতে বছরের পর বছর ধরে তিন ধাপে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায় ইবতেদায়ি প্রধান পদে নিবন্ধনধারীদের।
সূত্র আরো জানায়, শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ি প্রধান পদে উত্তীর্ণ নিবন্ধনধারীদের বঞ্চিত রাখার পরও ইবতেদায়ি প্রধান পদ বহাল রেখে ইতোমধ্যে এনটিআরসিএ ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষা সম্পন্ন করে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অথচ এখানেও ইবতেদায়ি প্রধানদের আবেদনের সুযোগ রাখেনি। এখানে জুনিয়র মৌলভী, জুনিয়র শিক্ষক, ইবতেদায়ি কারিদের সহকারী শিক্ষক, সহকারী মৌলভী বা প্রদর্শক, নিবন্ধনধারীদের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনের সুযোগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ইবতেদায়ি প্রধানদের সহকারী মৌলভী পদে অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়েছে। অন্যান্য পদে নিবন্ধনধারীদের সমাধান করলেও ইবতেদায়ি প্রধান পদের বিষয়ে তিন বছরেও কোনো সমাধান করেনি।
ইবতেদায়ি প্রধান পদে উত্তীর্ণ নিবন্ধনধারীদের কেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এনটিআরসিএর সিনিয়র এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮, ২৩ নভেম্বর ২০২০ সালে সংশোধিত আকারে প্রকাশ করেছে। এখানে ইবতেদায়ি প্রধান পদটি বর্তমান পদোন্নতিযোগ্য পদ হওয়ায় আমরা এ পদে নিয়োগ দিতে পারছি না। অন্য দিকে শিক্ষক নীতিমালায় ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংশোধিত নীতিমালা প্রকাশের আগেই পূর্বের নীতিমালার আলোকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে তা হলে সেই সিদ্ধান্ত এবং এর আওতায় সম্পন্ন হওয়া সব কাজ বৈধ মর্মে বিবেচিত হবে ।
এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার অসঙ্গতি ও বিভিন্ন বিষয়ের স্ববিরোধিতার বিষয়ে নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধনধারীরা আরো জানান, এ বিষয়ে তারা মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে অসংখ্যবার আবেদনপত্র ও স্মারকলিপি দিয়েছেন কিন্তু কোনো কাজই হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, সরকারের প্রণীত নীতিমালাই এখন এনটিআরসিএ মানছে না। অথচ ২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১১ ও ১৪ নম্বর এ বলা আছে, এই নীতিমালা জারির পূর্বে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী এই জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বর্ণিত প্যাটার্নভুক্ত শূন্যপদে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। ২৭ নম্বর এর (ঘ) তে বলা আছে, মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ জনস্বার্থে এ নীতিমালা প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবে।
২৮ নম্বর এ বলা আছে, এ নীতিমালার কোনো অনুচ্ছেদ বা অংশের বা বাক্যাংশের ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কাছ হতে তা গ্রহণ করতে হবে এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এ দিকে এ পদে নিয়োগ দানের জন্য ভুক্তভোগীরা আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত গত ১৩ এপ্রিল ২০২১ সালে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর বিষয়টির সমাধান করেননি।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (দাখিলও ইবতেদায়ি) জান্নাতুন নাহারের সাথে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।