বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রনি (৩৬) ও সরকারি সৈয়দ হাতেম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব আহাদ হোসেন আবিরকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) র্যাব-৮ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং খন্দকার আল মুঈন। এর আগে মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে বরিশাল নগরীর দুটি বাসা থেকে তাদের তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব ৮-এর মিডিয়া সেল।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মুঈন জানান, রাজনৈতিক দলসমূহের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একটি মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ ঘটনার পর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে রনি ও আবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রনির বরাতে খন্দকার মুঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি জানিয়েছে সে একটি রাজনৈতিক দলের বরিশালের শীর্ষ পদে রয়েছে। তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় এবং পরবর্তী সময়ে বরিশালের বিভিন্নস্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি তার লোকজন দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তার ভিডিও সংগ্রহ করে দেশে ও দেশের বাইরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে পাঠিয়েছে।
তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চেক করে কানাডা, ইউকেসহ দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের নাম্বারসহ বিরোধী (নিজ) দলের শীর্ষ নেতাদের নাম্বার সেভ পাওয়া গেছে। সেই নম্বরে যানবাহনে আগুন দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ভিডিও পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সে ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এর পেছনে সে তিনটি কারণ জানিয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো সে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছে তার দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করা অর্থাৎ মাঠে থেকে সে যে নাশকতা ও সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন সেগুলো নিশ্চিত করা আর একটি হলো সাধারণ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি তার একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। যার সূত্র ধরে গ্রেপ্তারের পর রনি জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা-বরিশাল লঞ্চগুলোতে নাশকতা করে বড় ধরণের আলোড়ন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য ছিল। আর এ সব ঘটনার সঙ্গে দলের শীর্ষ পর্যায়ের যারাই জড়িত রয়েছে বলে প্রমাণিত হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে।
রনি এর আগেও অগ্নিসংযোগের কারণে কারাভোগ করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মূল লক্ষ্য ভয়াবহ নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করা এবং দেশ অরাজক বা সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে এমন বিষয় প্রতিষ্ঠা করা।
গ্রেপ্তারকৃত আবির রেজাউল করিম রনির সহযোগী। সে রনির নির্দেশে বরিশাল মহানগরে বিভিন্নস্থানে সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা অবরোধসহ চোরাগুপ্তা হামলায় অংশগ্রহণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পূর্বের ৫টিসহ গত ২৮ অক্টাবরের পর ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন নাশকতার মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তাদের হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রযেছে।