ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ওটিটি মাধ্যমের কাজ নিয়েই। গত ৩০ জানুয়ারি বিঞ্জ-এ মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। এই সিরিজ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় মেহজাবিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজটি মুক্তির পর থেকেই সবাই আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেমন লাগছে?
নির্মাতা ভিকি জাহেদ যখন এই সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, তখন স্ক্রিপ্ট পড়েই মনে হয়েছিল- ‘দ্য সাইলেন্স’-এর গল্পে ভিন্ন কিছু আছে। দর্শক সহজেই এটি লুফে নেবেন। আর ভিকির পরিচালনায় ‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’সহ বেশ কয়েকটি কাজ করেছিলাম বিধায় এটুকু বিশ্বাস ছিল- তিনি দর্শকদের আলাদা একটা টেস্ট তৈরি করে দেবেন। সিরিজটি মুক্তির পর সেটাই সত্যি হলো।
নাটকে আর অভিনয় করবেন না- কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে এমন খবর দেখা গেছে। বিষয়টি কি সত্যি?
নাটক ছাড়ার কথা আমি কখনই বলিনি। ‘দ্য সাইলেন্স’ ওয়েব সিরিজের প্রিমিয়ার শোতে বলেছিলাম, ‘আমরাই যদি নাটক কনটিনিউ করি, তা হলে তো হবে না। একটা জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হবে আমাদের। আবার অন্যদের জন্য তো জায়গা করে দিতে হবে। নাটকে এখন নতুনরা অনেকেই ভালো করছেন। তাদের জায়গা করে দিতে হবে। তারা অনেক ভালো করুক। আমি মনে করি, ওদের সাপোর্ট দরকার।’ এই বক্তব্যকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করে খবরটি ছড়ানো হয়েছে। আমি নাটকেরই মেয়ে। মনের মতো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই নাটক করব। আবারও আসব।
ভালোবাসা দিবসের কোনো নাটকে দেখা যাবে কি?
না। এবারের ভালোবাসা দিবসে কোনো নাটকে কাজ করছি না। ওই সময়ে শুধু ‘দ্য সাইলেন্স’ ওয়েব সিরিজেই দর্শক আমাকে দেখতে পাবেন।
নাটকের অনেক বড় তারকাই এখন ওটিটিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আপনিও সেই দলে আছেন। এই মাধ্যমের ভবিষ্যৎ কেমন বলে মনে হয়?
ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করার বিষয়টিকে আমি পজিটিভলি দেখি। শিল্পীদের অভিনয় ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে, অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছে। যেটা দেশের জন্য কিংবা শিল্পীদের জন্য খুবই ভালো। ওটিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- ভালো বাজেট। যে কোনো ভালো কাজের জন্য বাজেট কিন্তু একটা বড় বিষয়। এই মাধ্যমে কাজের জন্য ভালো বাজেট থাকে। এই মাধ্যমে শিল্পীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে, নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করার সুযোগও রয়েছে এখানে। সবকিছু মিলিয়ে এই মাধ্যমের ভবিষ্যৎ ভালো বলেই আমার মনে হয়।
সমসাময়িক অনেকেই বড়পর্দায় কাজ করছেন। আপনাকে কবে দেখা যাবে?
এটা এখনই বলতে পারছি না। কারণ চলচ্চিত্র হলো বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। এই মাধ্যমে কাজ শুরুর আগে নিজেকে আরও ভালো করে ঝালিয়ে নিতে চাই। এর ফাঁকে ভালো কোনো অফার এলে ভেবে দেখব।
অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটি ভিউয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে আপনার নাটক। কেমন লাগে?
চমৎকার। তবে এ আনন্দ কিন্তু আমার একার নয়, পুরো টিমের। নাটক যত দর্শক দেখবেন, কাজের চাহিদা তত বাড়বে। কাজের চাহিদা বাড়লে সবার কাজ বাড়বে। ইন্ডাস্ট্রি সামনে এগিয়ে যাবে।
কিন্তু নাটকসংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেন ‘ভিউ’ ‘ভিউ’ করে এই মাধ্যমকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
এসব কথা যারা বলেন, তারাই বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবেন। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলার মতো এত বড় মানুষ আমি এখনো হইনি। নিজের কাজ নিয়েই ভাবি। দর্শকের ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চিন্তা করি।
আপনি টিভি নাটকের এই সময়ের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। আপনার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কে?
এই প্রশ্ন আমাকে প্রায় শুনতে হয়। কিন্তু ভারতের একটি টিভি অনুষ্ঠান দেখার পর এর উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমি মনে করি, এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে ভয়ানক কিছু ঘটে যেতে পারে। পছন্দের অভিনয়শিল্পীদের কথা বললে একটা তালিকা করতে হয়। আর শেষের দিকে যাদের নাম থাকবে, তাদের মন খারাপ হতে পারে। এতে ওই অভিনয়শিল্পী কষ্ট পেতে পারেন। এটা একজন মানুষের ব্যক্তিজীবনে বেশ প্রভাব ফেলে।
নতুন যারা অভিনয়ে আসতে চান, তাদের উদ্দেশে কী বলবেন?
পুরুষতান্ত্রিক এই ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব তরুণ-তরুণী স্বপ্ন দেখে বৈষম্যকে হার মানিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার, তাদের একটা বার্তাই দিতে চাই- নিজেকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তোমার কাজই তোমাকে সমতা এনে দেবে। তোমার পরিশ্রমের সামনে যেন বৈষম্যকারীরাও ছোট হয়ে যায়।