সকল সুযোগ- সুবিধা ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রবিবার (১৮ মার্চ) নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে এবং মূল কক্ষে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) সকল ধরনের অপারেশন ( অস্ত্রপচার) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মৃত্যুঝুঁকিসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা। ফলে অতিরিক্ত অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
জানা গেছে, জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াসে চালানো যেতো। অসহায়-গরীব রোগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল ঝালকাঠি জেলার নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক এখানে পোষ্টিং দেওয়া হয়নি। ফলে বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসকের অভাবে এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরনের অপারেশন। এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদেরকে নিতে হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ।
আবার ক্লিনিক সমূহে তাদের সার্জনের অপারেশন চার্জ, ওষুধ ও ক্লিনিক ভাড়াসহ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা অস্বাভাবিক ডেলিভারীর কথা জেনেও ভাগ্যের উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় ডাক্তার ও নার্সরা নরমাল ডেলিভারি করাতে ব্যর্থ হলে প্রসূতি ও শিশুর জীবন বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে পড়ে স্বজনরা। তখন ধার-দেনা করে তাদেরকে বরিশাল নিতে বাধ্য হতে হয়।
সেই ঝুঁকি নিতে গিয়েই গত জানুয়ারি মাসে উপজেলার নান্দিকাঠি গ্রামের সোহেল হাওলাদার তার নবজাতক ছেলেকে হারিয়েছেন। পথিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন প্রসূতি মায়েরা এ রকম নজিরও রয়েছে। এ জন্য নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ সার্জন (গাইনী অপারেশন) পোষ্টিং দিয়ে প্রসূতি সেবাসহ সকল অপারেশন কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন বরাবর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার স্বারকলিপিও পেশ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদার জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এই সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জরুরি প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরনের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলি পারভীন। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়া অন্য কেউ ওই সেবা দিতে পারবেন না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ডা. শিউলি পারভীন বলেন, জেনারেল সার্জন, গাইনী সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয় লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম।
ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। যথাসম্ভব সমাধানের চেষ্টা করা হবে।