সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এককভাবেও মাঠে থাকবে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেছেন, ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। এটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে এর পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ইস্যু সামনে চলে এলে, বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে। বিশেষ করে রাজধানীকেন্দ্রিক সাংগঠনিক ইউনিট সক্রিয় রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত আড়াই মাসে তারা সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে যুগপৎভাবেই। তবে এর ফাঁকেই বিএনপি আলাদাভাবেও বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ৫ দিন পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণে। জানা গেছে, আগামী সময়গুলোতেও এ ধরনের নানা কর্মসূচি চলতে থাকবে। বিএনপির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলোকে নয়াপল্টনকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিয়ে সরব থাকতেও বলা হয়েছে।
বিএনপির এক নেতা গতকাল জানান, নয়াপল্টন বিএনপির শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ই নয়, এটি আন্দোলনেরও কেন্দ্র। আগামী দিনের চূড়ান্ত আন্দোলনের স্থলও হবে এই নয়াপল্টন।
কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কার্যালয় একই ভবনে থাকায় এমনিতেই প্রতিদিন কিছুটা না কিছু সরব থাকে নয়াপল্টন। বিএনপি মনে করছে, নয়াপল্টনকেন্দ্রিক এই মুখরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে সাংগঠনিক চাঞ্চল্য ধরে রাখা যায়। এসব কারণে যুগপৎ কর্মসূচির বাইরেও দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে কর্মসূচি বাড়াতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এসবের অংশ হিসেবেই আগামীকাল ৭ মার্চ নয়াপল্টনে একটি সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সমাবেশের জন্য ডিএমপিতে আবেদনও করেছে বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু এ প্রসঙ্গে জানান, চলমান মামলা-হামলা-গ্রেফতারসহ নানা দাবিতে ৭ মার্চ নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বরাবর (ডিএমপি) চিঠি দেয়া হয়েছে। বেলা ২টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হবে।
৭ মার্চ বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারাবন্দী দিবসও। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গ্রেফতার করেছিল তারেক রহমানকে। সেই থেকে এ দিনকে কারাবন্দী দিবস হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন।
আজ নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না জানান, বেগম খালেদা জিয়াসহ আটককৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বেলা আড়াইটায় এই সমাবেশ হবে। সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ দিকে প্রায় এক মাস ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের পর আগামী ১১ মার্চ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, এই কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোতে পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ১১ মার্চ ছাড়াও রমজানের আগে যুগপৎভাবে আরো একটি কর্মসূচি পালন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ১৮ মার্চ আরেকটি কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
বিএনপি এবার রমজানেও ইফতার পার্টির পাশাপাশি রাজপথে বিশেষ করে রাজধানীতে সরব থাকতে চায়। এ ক্ষেত্রে তারা ১০ দফার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনসম্পৃক্ততামূলক ইস্যুকে গুরুত্ব দেবে।
আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এটি জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, কথা বলার অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।
তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা এই আন্দোলনে আছি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব। আমরা শান্তির সাথে আন্দোলন করছি, আন্দোলনে থাকব। কোনো বাধা দিলে সেই বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবো। জনগণ আমাদের সাথে আছে। জনগণই বাধা সব প্রতিরোধ করবে।