মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের কার্যক্রমে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অনিয়মের সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এর মধ্যে অবৈধভাবে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম: ব্রিজিং দ্য গ্যাপস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমরা নগদে পরিচালনায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি। এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি হয়েছে। নগদের অনিয়ম খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চলছে।
ডাক বিভাগের অনুমোদন ছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) কোম্পানিটির ইলেক্ট্রনিক মানি (ই মানি) তৈরি, সরকারি ভাতা বিতরণ না করে অর্থ সরানোর মত অনিয়মের বিষয় প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি।
অনিয়মগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, নগদে অডিট চলছে। এরইমধ্যে আমরা খুঁজে পেয়েছি প্রকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক মানি তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত ৬০০ কোটি টাকা তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো এমএফএস কোম্পানি গ্রাহকের নগদ আকারে জমা দেওয়া অথের্র সমপরিমাণ ইলেক্ট্রনিক অর্থ (ই মানি) তৈরি করতে পারবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, কোনো গ্রাহক তার হিসাবে ১০০ টাকার ক্যাশইন করলে, সমপরিমাণ ১০০ টাকার ইলেক্ট্রনিক মানি তৈরি করতে পারবে কোনো এমএফএস কোম্পানি।
বয়স্ক, উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রকার সরকারি ভাতার অর্থ বিতরণ না করে নগদ সেই অর্থ অন্যখানে সরিয়েছে বলেও জানান গভর্নর।
এমএফএস কোম্পানিটিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সেখানে প্রশাসক বসানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নগদকে পুনর্গঠন করা হবে, এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তুলতে।কোম্পানিটিকে সক্রিয় করতে নতুন বিনিয়োগ আনার কথাও বলেন তিনি।
ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর যাত্রা ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। শুরু থেকে বলা হয়, এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা। তবে ডাক বিভাগের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এমএফএস সেবা দেওয়া নিয়ে শুরু করে আপত্তি ও সমালোচনার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। কার্যক্রম শুরুর পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ নিয়ে আপত্তিও ওঠে। এর মধ্যেই আগের সরকারের সময় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সও পায় কোম্পানিটি।
সেমিনারে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা টেকসই করতে নতুন বিনিয়োগ আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, টেলিকম খাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছে না অতিরিক্ত শুল্ক থাকায়। আমাদের টেলিকম খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নইলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পাওয়া যাবে না। কলড্রপ হবে। এটি নীতিমালা করে সম্ভব না, প্রয়োজন বিনিয়োগ।